সোনা পাতা ব্যবহারে পেটের যাবতীয় সমস্যার সমাধান
সোনা পাতা কি? আমরা হয়তো অনেকেই জানি আবার অনেকেই হয়তো সোনা পাতা সম্পর্কে
জানিনা। সোনা পাতার গুণের সম্পর্কে যারা জানেন না তাদের জন্য আমার এই লেখাটি।
চলুন তাহলে সোনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। সোনা পাতার উপকারিতা
কি? সোনা পাতার অনেকগুলো উপকারিতা দিক রয়েছে।
তার মধ্যে সোনা পাতা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।
এছাড়াও গ্যাসের সমস্যা, আমাশয়, পেট ব্যথা এক কথায় বলতে পেটের যাবতীয় সমস্যার
সমাধান করতে পারে সোনা পাতা। মোটকথা পেটের যাবতীয় সমস্যা সমাধান করতে সোনা পাতা
জাদুকারী ভাবে কাজ করে থাকে। এছাড়াও সোনা পাতা আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে
উল্লেখযোগ্য উপকারিতা হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং হজম প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করা।
পেজ সূচিপএঃ পাতার খাওয়ার ফলে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়।
ওজন কমাতে সোনা পাতা
ওজন কমাতে সোনা পাতা চা সেবন করতে পারেন। প্রতিদিন সকালবেলা ২কাপ পরিমাণ পানি এক
চামচ পরিমাণ সোনা পাতার গুড়া চুলাতে ফুটাতে হবে। পানি যখন এক কাপ পরিমাণ হয়ে
আসবে তখন চুলা থেকে নামিয়ে ছেঁকে গরম অবস্থায় পান করুন। প্রতিদিন সকালে খালি
পেটে সোনা পাতার চা সেবন করুন এতে করে আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
সোনা পাতার গুনাগুন
সোনা পাতার অনেক গুণাগুণ রয়েছে।সোনা পাতার গুনাগুনের মধ্যে বিশেষ করে এটিকে
ব্যবহার করা হয় মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য এবং হজম প্রক্রিয়া সক্রিয় করতে। যাদের কষ্ট
কাঠিন্য সমস্যা রয়েছে তারা সোনা পাতা ব্যবহারের মাধ্যমে এই থেকে সমস্যা পেতে
পারেন।
সোনা পাতা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
দীর্ঘদিন ধরে সোনা পাতা সেবন করলে শরীরে পটাশিয়াম লেভেল কমে যায়। পটাশিয়াম
লেভেল কমে গেলে এই অবস্থায় কে বলা হয়ে থাকে হাইপোক্যালিমিয়া,
হাইপোক্যালিমিয়ার লক্ষণ সম্মুহ পেট ব্যথা লো ব্লাড প্রেসার, গোস্ত পেশীর
দুর্বলতা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, দৃষ্টিভোম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাঘাত ঘটে, হৃদ
স্পন্দের পরিবর্তন দেখা দেয়
গর্ভ অবস্থায় সোনা পাতা খাওয়া যাবে কি
গর্ভ অবস্থায় সোনা পাতা খাওয়া যাবেনা। কারণ সোনা পাতা খাওয়ার পর চার থেকে পাঁচ
ঘণ্টা পর বাথরুমের সমস্যা শুরু হয়। সে কারণে যারা গর্ভবতী তারা ভুলেও সোনা পাতা
খাবেন না এতে করে আপনার এবং আপনার গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। তাই গর্ভ
অবস্থায় সোনা পাতা না খাওয়াই ভালো।
সতর্কতা
সোনা পাতা সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিনের বেশি সেবন করা ঠিক হবে না। যদি কারো
অন্তের কোনো রোগ থাকে যেমন অন্তের প্রদাহ আলসার এসব রোগ থেকে থাকে সেক্ষেত্র
সোনা পাতা খাওয়া যাবে না।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুব ভালো কাজ করে
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সোনা পাতা একটি পরিচিত প্রাকৃতিক উপাদান। সোনা পাতা একটি
প্রাকৃতিক রিচক হিসেবে কাজ করে, যা অন্রের কার্যকলাপকে উৎসাহিত করে এবং মল সহজে
বাহির হতে সাহায্য করে।
সোনা পাতার উপকারিতা
- রিচক প্রভাবঃ সোনা পাতায় সিনোসাইড নামে একটি যৌগ থাকে, যা অন্তের পেশি গুলোকে উদ্দীপিত করে এবং মলত্যাগ প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
- প্রাকৃতিক উপাদানঃ সোনা পাতা প্রাকৃতিক উদ্ভিদ, যা কেমিক্যাল ভিত্তিক রিচকের তুলনায় কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
- ব্যবহারিক সহজতাঃ সোনা পাতার চা, ক্যাপসুল এবং ট্যাবলেট আকারে সহজে পাওয়া যায় ।
হজম প্রক্রিয়া সক্রিয় করতে
সোনা পাতা হজম প্রক্রিয়ার সক্রিয় করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে একটি পরিচিত
প্রাকৃতিক উপাদান। সোনা পাতা অন্তের প্রক্রিয়াকে সহজ করে তবে, সোনা পাতা
শুধুমাত্র হজম প্রক্রিয়া সক্রিয় করতে ব্যবহার হয় না; এর মূল উদ্দেশ্য হলো
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা । নিচে সোনা পাতা ব্যবহারের পদ্ধতি এবং এর প্রভাব সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
সোনা পাতার প্রভাব
- অন্তের পেশির উদ্দীপনাঃ সোনা পাতায় সিনোসাইডস নামক যৌগ থাকে, যা অন্ধের বেশি গুলিকে উদ্দীপিত করে এবং মল চলাচল কে ত্বরান্বিত করে।
- রিচক প্রভাবঃ এটি মল নরম করে এবং অন্তের মধ্য দিয়ে মলের গতি বাড়ায়, ফলে মল ত্যাগ সহজ হয়।
- প্রাকৃতিক সমাধানঃ সোনা পাতা একটি প্রাকৃতিক সমাধান হওয়ায় এটি কেমিক্যাল ভিত্তিক রেচকের তুলনায় কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি
1.সোনা পাতার চাঃ
- এক কাপ গরম পানিতে এক থেকে দুই গ্রাম সোনা পাতা যোগ করে ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন।
- তারপর থেকে নিয়ে দিনে একবার করে পান করুন সাধারণত হওয়ার আগে।
2.সোনা পাতার ক্যাপসুল / ট্যাবলেটঃ
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত ১৭.২ - ৩৪.৪ মিলিগ্রাম দিনে একবার গ্রহণ করতে বলা
হয়। তবে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডোজ নির্ধারণ করুন।
সতর্কতাঃ
- সোনা পাতার অতিরিক্ত ব্যবহারে ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা এবং ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স হতে পারে।
- দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে অন্তের কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে; তাই এটি অল্প সময়ের জন্য ব্যবহার করতে হবে।
- গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের সোনা পাতা ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সোনা পাতা দেখতে কেমন
সোনা পাতা দেখতে কাঁচা অবস্থায় অনেকটা মেহেদী পাতার মতো। সোনা পাতা সচরাচর দেখা
যায় না। গ্রাম অঞ্চলে এটি পাওয়া যায়। সোনা পাতা অনেক গুণসম্পন্ন একটি পাতা।
আগের যুগের মানুষ বিভিন্ন গাছ-গাছরা থেকে ভেষজ ওষুধ তৈরি করতেন। এর মধ্যে সোনা
পাতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। বিশেষ করে
কোষ্ঠকাঠিন্য এবং হজম প্রক্রিয়া সক্রিয় করার কাজে সোনা পাতা ব্যবহার করা হয়ে
থাকে।
সোনা পাতা সংরক্ষণ পদ্ধতি
সোনা পাতা ভালো করে রোদে শুকিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভালো করে মুড়িয়ে শুকনো
ঠান্ডা জায়গায় রাখলে অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে। আবার সোনা পাতার গুড়া কাচের
শুকনো জারে সংরক্ষণ করা যায়। এতে করে দীর্ঘদিন পর্যন্ত সোনা পাতা বা সোনা পাতার
গুড়া ভালো থাকে।
সোনা পাতা বাজারে আসতো এবং গুঁড়ো দুইভাবে কিনতে পাওয়া যায়।
- সোনা পাতার গুড়া যেভাবে খাবেন প্রথমে এক কাপ গরম পানিতে এক চামচ পরিমাণ সোনা পাতা দিয়ে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। তারপর পানি ছেঁকে নিয়ে সেবন করুন।
- সোনা পাতার চা বানিয়ে খেতে পারেন। দুই কাপ পরিমাণ পানিতে এক চামচ সোনা পাতা গুঁড়ো পানিতে দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। পানি যখন এক কাপ পরিমাণ হয়ে যাবে তখন চুলা থেকে নামিয়ে চায়ের মত করে সেবন করতে হবে।
- অল্প কিছু আস্ত সোনা পাতা এক গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরের দিন সকালে ওই পানি ছেঁকে পান করতে হবে।
আমাদের শেষ কথা
সোনা পাতার অনেক গুন সম্পন্ন একটি পাতা। সোনা পাতার মধ্যে রয়েছে অনেক ভেষজ ঔষধের
গুনাগুন যেটা কিনা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে সক্রিয়া করতে সাহায্য করে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সোনা পাতা ওজন
কমাতেও চমৎকার কাজ করে থাকে। সোনা পাতা দীর্ঘদিন ধরে খাওয়া উচিত হবে না। উপরে
লেখা যারা পড়েছেন তারা বুঝতে পারবেন সোনা পাতা কিভাবে খেতে হবে। আশা করছি আমার
এই লেখাটি পড়ে আপনি উপকৃত হবেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url