আপনি কি জানেন গর্ববস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা কেন হয়? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকে আমরা আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ সম্পর্কে।

 গর্ভবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়া একটি সাধারন সমস্যা, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যে সকল কারণে গর্ভবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হতে পারে, সে সকল কারণগুলো এবং তাদের ব্যাখ্যা নিচে দেওয়া হলো:

• লিগামেন্টের টান এর কারণে।
• কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যার কারণে।
• গ্যাসের সমস্যার কারণে।
• ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন।
• বমি বা বদহজমের কারণে।
• ব্রাকস্টন হিক কন্ট্রকশন।
• গর্ভপাতের আশঙ্ক।
• অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর কারণে।
• প্যানক্রিয়াটাইটিসের কারণে।
• প্লাসেন্টা সংক্রান্ত  সমস্যা।
• শেষ কথা।

গর্ভবস্থায় শরীরের বিভিন্ন অংশের টান পড়তে পারে, বিশেষ করে পেটের বাম পাশে। এটি সাধারণত দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাসের দিকে ঘটে থাকে। যখন শিশুর ওজন বাড়ে এবং মায়ের শরীরের তত বেশি টান পড়ে। লিগামেন্ট এর টানের লক্ষ্য গুলো হলোঃ

1. হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা অনুভব হয়
2. ব্যথা স্থানান্তরিত বা তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে
3. এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়গুলো হলো:
4. বিশ্রাম নেওয়া
5. ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া
6. বিশ্রাম কালে হাঁটু বাঁকা করে শুয়ে থাকা

গর্ভবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারন সমস্যা। প্রায় মেয়েদেরই গর্ভবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হয়ে থাকে। গর্ভবস্থায় হরমোন পরিবর্তন এবং প্রোগেসটেরন হরমনে অভাবে অন্তের গতিশীলতা কমে যেতে পারে, যার ফলে পেটের বাম পাশে ব্যথা হতে পারে।

1. পেট ফাঁপা
2. কষা মলত্যাগ

এই অবস্থায় আমরা যা করতে পারি তা হল:

1. পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে
2. সাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
3. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা

গর্ভবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে আমরা এগুলো করতে পারি তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

গর্ভ অবস্থায় হরমোন পরিবর্তনের কারণে পেটে গ্যাস জমা হতে পারে, সে কারণে গর্ভবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথার কারণ ও হতে পারে।

গর্ভবস্থায় গ্যাসের সমস্যার কারণে পেট ব্যথার লক্ষণ সমূহ গুলো হলোঃ

1. পেট ফাঁপা
2. মৃদু থেকে তীব্র ব্যথা
3. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া

গর্ববস্থায় গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়গুলো হলোঃ

1. ছোট ছোট খাবার খাওয়া
2. গ্যাস উৎপাদনকারী খাবার এড়িয়ে চলা
3. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা
4. বমি বা বদহজমের কারণে

গর্ভ অবস্থায় বদহজম এবং বমি হওয়ার সাধারণ বিষয়, এই সমস্যাটি কম বেশি সকল গর্ভবতী মহিলাদের হয়ে থাকে। এর কারণেও পেটের বাম পাশে ব্যাথার কারণ হতে পারে।

1. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
2. পেট ব্যথা করা
3. উপশমের উপায়
4. সহজপাচ্য খাবার খাওয়া
5. তেল মসলা কম খাওয়া
6. পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া
7. ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া
8. ফলের রস ও বেশি করে পানি পান করা

গর্ভবস্থায় ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন (UTI) হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এটির কারণে পেটের বাম পাশে ব্যথার কারণ হতে পারে।

1. প্রসব করার সময় ব্যথা অনুভব করা
2. ঘনঘন প্রস্রাব করার ইচ্ছা
3. এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় গুলো হলো:
4. প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা
5. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
6. প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করা

গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ের এই সমস্যা বা মিথ্যা প্রসব ব্যথা হতে পারে, যা পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়া কারণ হতে পারে।

1. অনিয়মিত এবং মৃদু কনট্রাকশন।
2. এ ব্যথা কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট স্থায়ী হতে পারে।

1. বিশ্রাম নেওয়া।
2. পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করা।
3. অবস্থান পরিবর্তন ক।

গর্ববস্থায় প্রথম দিকে পেটের বাম পাশে তীব্র ব্যথা হলে এটি গর্ভপাতের ইঙ্গিত হতে পারে। তাই দেরি না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।এটি একটি জরুরী চিকিৎসা সমস্যা এবং অবলম্বী চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

1. তীব্র ব্যথা
2. রক্তপাত

অ্যাপেন্ডিসাইটিস সাধারণত পেটের ডান পাশে ব্যথা সৃষ্টি করে তবে, এটি বামপাশেও ব্যথার কারণ হতে পারে।

1. তীব্র ব্যথা
2. বমি বমি ভাব
3. জ্বর

এইরকম হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জরুরী ভিত্তিতে অপারেশন প্রয়োজন হতে পারে।

প্যানক্রিয়াটাইটিস বা অগ্নাশয় এর প্রদাহ পেটের বাম পাশে ব্যথার কারণ হতে পারে।

1. তীব্র ব্যথ
2. বমি বমি ভাব
3. জ্বর

এরকমটা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

গর্ববস্থায় প্লাসেন্টা সংক্রান্ত সমস্যাও পেটের বাম পাশে ব্যথার কারণ হতে পারে। এটি একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে এবং তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

1. তীব্র ব্যথা
2. রক্তপাত
3. শিশুর হার্টবিট কমে যাওয়া

গর্ববস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যা সাধারণ তো স্বাভাবিক হলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর সমস্যা নির্দেশ করতে পারে। কোন ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করে নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করা উচিত। আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারা পড়েছেন আশা করছি কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। ধন্যবাদ।