গর্ভবস্থায় এই নিয়ম মেনে চললে মা ও শিশু দুজনই সুস্থ থাকবে

গর্ভবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ সময়, যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক দায়িত্ব নিয়ে আসে। গর্ভবস্থায় সুস্থ থাকতে এবং সঠিক যত্ন নিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্পর্কে জানতে হবে। যারা প্রথম মা হয় তারা হয়তো তাদের কিভাবে যত্ন নিতে হবে, কি খাবার খেতে হবে, কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা।


কতটুকু ঘুমাতে হবে। গর্ভবস্থায় কোন ওষুধ খাবেন, আর কোনটা খাবেন না সে সম্পর্কে আজানা। আজকের আর্টিকেলটি গর্ভবতী মায়েদের জন্য। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

পেজ সূচিপত্র:গর্ভবস্থায় করণীয়: সুস্থ মা ও শিশুর জন্য নির্দেশিকা

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস করতে হবে



গর্ভবস্থায় সঠিক পুষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটি মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে থাকে।

গর্ভবস্থায় কি কি খাবেন:

  1. ফল ও সবজি: গর্ভবস্থায় প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে তাজা ফল ও সবজি খাওয়া উচিত। এতে ভিটামিন খনিজ এবং ফাইবার পাওয়া যায়। তাই গর্ভবস্থায় আমাদের ফল ও সবজি খাওয়া খুব জরুরী।
  2. প্রোটিন: একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় ডাল, মাছ, মুরগির, ডিম ও বাদাম রাখতে হবে। এই খাবার গুলো থেকে প্রোটিন পাওয়া যায়।
  3. কার্বোহাইড্রেট: কার্বোহাইড্রেট খাবার যেমন পুরো শষ্য, রুটি, ভাত ও পাস্তা খাওয়া উচিত।
  4. ক্যালসিয়াম: গর্ভবস্থায় দুধ, পনির দই ইত্যাদি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
  5. আয়রন: মাংস, ডাল, শাকসবজি ও আয়রন সমৃদ্ধ শস্য গ্রহণ করা উচিত।

গর্ভবস্থায় কি কি এড়িয়ে চলবেনঃ

  1. অ্যালকোহল: গর্ব অবস্থায় অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা উচিত।
  2. ক্যাফেইন: প্রতিদিন ক্যাফেইন এর পরিমাণ সীমিত রাখা উচিত।
  3. অধিক চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার: অতিরিক্ত চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এই সময় এড়িয়ে চলা উচিত।

পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম

গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় পর্যাপ্ত ঘুম মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে
পরামর্শ

  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।
  • দুপুরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া উচিত।
  • আরামদায়ক বিছানায় ঘুমানোর ব্যবস্থা করা উচিত

নিয়মিত ব্যায়াম করা

গর্ভবস্থায় হালকা ব্যায়াম করা উচিত, যা মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।

ব্যায়ামের ধরন:

  1. পায়ে হাটা: প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা উচিত।
  2. যোগব্যায়াম: প্রাকৃতিক যোগব্যায়াম এবং প্রায়নাম চর্চা করা যেতে পারে।
  3. তলপেট ও মেরুদন্ডের ব্যায়াম: তলপেট ও মেরুদন্ডের শক্তি বাড়াতে ব্যায়াম করা উচিত।

সর্তকতা

  • ভারী ও জটিল ব্যাম এড়িয়ে চলা উচিত।
  • গরমে বেশি পরিশ্রম করা উচিত নয়।
  • ব্যায়াম করার সময় পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।

পরিমাণ মতো পানি পান

গর্ভবস্থায় পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরী। পানি শরীরকে হাইড্রেট রাখে এবং টক্সিন দূর করে।

পরামর্শ

  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৮--১০গ্লাস পানি পান করা উচিত।
  • ফলের রস, দুধ ও শুক ও পান করা যেতে পারে।

চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন


  • গর্ভবস্থায় নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও ওষুধ প্রয়োগে সতর্ক থাকতে হবে।

নিয়মিত পরীক্ষা:

  1. আল্ট্রাসাউন্ড: নির্দিষ্ট সময়ে আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করানো উচিত।
  2. রক্ত পরীক্ষা: হিমোগ্লোবিন, সুগার ও অন্যান্য রক্ত পরীক্ষা করা উচিত।
  3. পেশার চেক: নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাণ করা উচিত।

মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখা

গর্ভ অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মানসিক সুস্থতা মা ও শিশুর উভয়ের জন্য প্রয়োজন।

পরামর্শ

  1. ইতিবাচক চিন্তা: এ সময়ে ইতিবাচক চিন্তা ও মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করা উচিত।
  2. মেডিটেশন: গর্ভবস্থায় নিয়মিত মেডিটেশন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা উচিত।
  3. সমর্থন: পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সমর্থন গ্রহণ করা উচিত।


ওষুধ ও পরিপূরক গ্রহণে সতর্ক থাকা

  • গর্ভবস্থায় ওষুধ ও পরিপূরক গ্রহণে সতর্ক থাকা উচিত।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ও ভিটামিন গ্রহণ করা উচিত।

কিছু সাধারণ পরিপূরক:

  1. ফলিক অ্যাসিড: শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  2. আয়রন: রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  3. ক্যালসিয়াম: হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন।

স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা

গর্ভবস্থায় কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অনুসরণ করা উচিত।

পরামর্শ:

  1. ধুমপান এড়িয়ে চলা: গর্ভবস্থায় ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য সম্পন্ন ভাবে এড়িয়ে চলা উচিত।
  2. অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা: গর্ভবস্থায় অ্যালকোহল পান করা উচিত নয়।
  3. পর্যাপ্ত বিশ্রাম: গর্ভবস্থায় পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়া উচিত।

গর্ভবস্থায় হাইজিন থাকা

গর্ভ অবস্থায় ব্যক্তিগত হাইজিন বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়

পরামর্শ

  • নিয়মিত গোসল: এ সময় প্রতিদিন গোসল করা উচিত।
  • পরিষ্কার কাপড় পরা: এ সময় পরিষ্কার ও আরামদায়ক কাপড় পড়া উচিত।
  • হাত ধোয়া: খাবার আগে ও পরে এবং টয়লেট ব্যবহারের পরে হাত ধোয়া উচিত।

লেখক এর শেষ কথা

গর্ভবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজন সঠিক যত্ন ও মনোযোগ। ওপরের নির্দেশিকা গুলি অনুসরণ করে আপনি গর্ভ অবস্থায় সুস্থ ও সুখী থাকতে পারেন। গর্ব অবস্থায় কোন জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আশা করি যারা আজকের আর্টিকেলটি পরেছেন তারা উপকৃত হবেন। ধন্যবাদ।






এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url