গর্ভবস্থায় কষা পায়খানা দূর করতে ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়ম
আজকে আমরা গর্ভবস্থায় কষাপায়খানা দূর করতে ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। যারা গর্ভবতী মহিলা আছেন, কষাপায়খানা সমস্যা ভুগছেন, তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি উপকারে লাগবে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক গর্ভবস্থায় কষাপায়খানা দূর করতে ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
গর্ভবস্থায় কষাপায়খানা একটি সাধারণ সমস্যা, যা হর মনের পরিবর্তন এবং অন্তর গতিশীলতা হ্রাসের কারণে ঘটে থাকে। এই সময়ে ইসবগুলের ভুষি একটি নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক সমাধান হতে পারে। গর্ভবস্থায় কষাপায়খানা দূর করতে ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হল। আশা করি এই তথ্যগুলো আপনার উপকারে আসবে।
পেজ সূচিপত্র: এর মধ্যে যেই অংশটি আপনি পড়তে চান সেখানে ক্লিক করুন
- ইসবগুলের ভুষির কার্যকারিতা
- ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়ম
- কষা পায়খানা নরম করে
- আঁশের ঘাটতি পূরণ করে
- প্রাকৃতিক এবং নিরাপদ
- ইসবগুলের ভুষি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
- কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
- সর্তকতা এবং অন্যান্য টিপস
- লেখকের শেষ কথা
ইসবগুলের ভুষির কার্যকারিতা
ইসবগুলের ভুষি(psyllium husk)কষাপায়খানা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এটি মূলত দ্রবণীয় আশির( soluble fiber)সমৃদ্ধ একটি উৎস, যা অন্তের মধ্যে পানি শোষণ করে এবং মলকে নরম ও আয়তনে বৃদ্ধি করে। যার ফলে মল সহজে অন্তের মধ্যে দিয়ে চলাচল করতে পারে,যা মলত্যাগের প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে । ইসবগুলের ভুষি হলো একটি প্রাকৃতিক আসের উৎস যা অন্তের গতিশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে। ইসবগুলের ভুষি পানির সাথে মিশে একটি জেলের মত পদার্থ তৈরি করে যা মলকে নরম এবং সহজে বেরিয়ে আসার জন্য সাহায্য করে থাকে।
ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়ম
- পরিমাণ: প্রথমে সামান্য পরিমাণ দিয়ে শুরু করুন যেমন এক থেকে দুই চামচ দিয়ে একবার। ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়িয়ে দিন দুই থেকে তিন বার পর্যন্ত খেতে পারেন, যদি প্রয়োজন হয়।
- খাওয়ার সময়: অনেকেই ইসবগুলের ভুষি সকালে খালি পেটে খেয়ে থাকেন। ইসবগুলের ভুষি রাতের খাবারের পর খেতে হয়। খাবার খাওয়ার আগে আপনি ইসবগুলের ভুষি পানি দিয়ে ভিজিয়ে রেখে দিতে পারেন।খাবার শেষে সেটি গ্রহণ করুন এতে করে আপনার যে কষা পায়খানা সমস্যা সেটি দূর করতে অনেক অংশে সাহায্য করবে ইসবগুলের ভুষি।
- পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া: এখন অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ইসবগুলের ভুষি কিসের সঙ্গে মিশিয়ে খাবেন? ইসবগুলের ভুষি পানি অথবা জুসের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এক গ্লাস পানির মধ্যে এক থেকে দুই চামচ ইসবগুলের ভুষি মিশিয়ে নিন, তারপর এটি কি কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। ভিজে রাখার ফলে এটি জেলির মত আকার ধারণ করে। রাতের খাবার শেষে আপনি পানিতে মেশানো ইসবগুলের ভুষি খেয়ে নিবেন। ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার সময় পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরী। সাধারণত এক গ্লাস 250 মিলি পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া উচিত। ইসবগুলের ভুষি সাথে পর্যাপ্ত পানি না খেলে এটি গলায় আটকাতে আটকে যেতে পারে বা কোষ্ঠকাঠিন্য আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
কষাপায়খানা নরম করে
গর্ভবস্থায় মায়েরা কম বেশি কষাপায়খানার সমস্যায় ভুগে থাকেন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিনের কম মলত্যাগ হলে আমরা সেটাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে থাকে গর্ভবস্থায় কষাপায়খানা কে নরম করা যায় প্রাকৃতিক উপায়ে ইসবগুলের ভুষির খাওয়ার মাধ্যমে করা যায়। ইসবগুলের ভুষি অন্তের মধ্যে পানি শোষণ করে এবং মলকে নরম ও আয়তন ও বৃদ্ধি করে, যা মলত্যাগকে সহজ করে। গর্ভ অবস্থায় যাদের এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে তারা দিনে দুইবার ইসবগুলের ভুষি খেতে পারেন। ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার মাধ্যমে আপনার যে সমস্যা সে সমস্যা দূরীকরণে সাহায্য করবে আশা করা যায়। অবশ্যই ইসবগুলের ভুষি খাবার পর অন্ততপক্ষে এক গ্লাস(২৫০ মিলি) পানি পান করতে হবে। তা না হলে এটি ভালো কাজ করবে না।
আঁশের ঘাটতি পূরণ করে
গর্ভবস্থায় কষাপায়খানা দূর করতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ জাতীয় খাদ্য খেতে হবে। এই সময় মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন এর কারণে প্রায় সব মায়েরাই কষাপায়খানার সমস্যায় ভুগে থাকেন। আঁশ জাতীয় খাবার মনকে নরম করতে সাহায্য করে থাকে। ইসবগুলের ভুষি একটি আঁশ জাতীয় খাবার। যারা খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত আঁশ পায় না, তারা ইসবগুলের ভুষি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। ইসবগুলের ভুষি আঁশের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করবে।
প্রাকৃতিক ও নিরাপদ
ইসবগুলের ভুষি প্রাকৃতিক ও নিরাপদ। তাই গর্ভবস্থায় ইসবগুলের ভুষি সেবন করলে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। ইসবগুলের ভুষি প্রাকৃতিক এবং অধিকাংশ মানুষের জন্য নিরাপদ একটি উপায়। ইসবগুলের ভুষি দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবহারেও নিরাপদ এবং অন্যান্য অনেক কষ্টকাঠিন্য দূরীকরণ ওষুধের তুলনায় এটি কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। তাই এটি নিরাপদ গর্ভবতী মেয়ে দের জন্য।
ইসবগুলের ভুষি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
- ইসবগুলের ভুষি সাধারণত শুকনো এবং ঠান্ডা স্থানে সংরক্ষণ করা উচিত।
- আদ্রতা থেকে দূরে রাখতে হবে, কারণ ইসবগুলের ভুষি দ্রুত আদ্রতা শোষণ করে।
- ইসবগুলের ভুষি একটি পরিষ্কার ও শুকনো কাঁচের জার অথবা প্লাস্টিকের বয়াম এর মধ্যে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।
- এইভাবে সংরক্ষণ করলে ইসবগুলের ভুষি অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে।
কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে
ইসবগুলের ভুষি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। ইসবগুলের ভুষি শরীরের কোলেস্টেরল শোষণ হ্রাস করতে পারে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অনেক অংশ সাহায্য করে। ইসবগুলের ভুষি একটি প্রাকৃতিক উপায়ে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য কার্যকরী উপায়।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
সতর্কতা এবং অন্যান্য টিপস
গর্ভাবস্থায় কোন নতুন খাবার বা সম্পূরক গ্রহণের আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। যদি আপনি অন্য কোন ওষুধ খেয়ে থাকেন, তবে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পর কমপক্ষে একঘন্টা বিরতি দিন, কারণ এটি কিছু ওষুধের শোষণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
- পানি পান করা: প্রতিদিন পর্যন্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: গর্ভবস্থায় অন্যান্য ফাইবার সম্পৃক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ফল এবং পুরো শস্য, রুটি এই সমস্ত খাবার আপনাকে খেতে হবে।
- হালকা ব্যায়াম: প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম অথবা হাটা অন্তের গতিশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটতে পারেন, এতে করে আপনার খাবার হজম প্রক্রিয়া সক্রিয় করতে সাহায্য করবে।
গর্ভবস্থায় সুস্থ থাকার জন্য সঠিক খাদ্যাভাস এবং জীবন পরিবর্তন অপরিহার্য। যদি এরপরেও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি না পান তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখকের শেষ কথা
ইসবগুলের ভুষি কষাপায়খানা নিরাময় প্রমাণিত ভাবে কার্যকরী এবং অনেক ক্ষেত্রে এটি নিরাপদ। তবে উপযুক্ত পরিমাণ এবং সঠিকভাবে গ্রহণ করা নিশ্চিত করতে হবে। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি যারা গর্ভবতী মহিলারা পড়েছন তারা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। আমাদের এই ওয়েবসাইটে এই ধরনের আরো কনটেন্ট রয়েছে আপনারা চাইলে দেখতে পারেন। আপনাদের যদি কোন মন্তব্য থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url