শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার দশটি ঘরোয়া উপায়
আপনি কি শিশুর পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া নিয়ে চিন্তিত? চিন্তার কোন কারণ নেই
আজকের আর্টিকেলে শিশুর পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া বন্ধ করার দশটি ঘরোয়া উপায়
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে শিশুর
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া বন্ধ করার যে দশটি ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করা
হয়েছে, সে সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন।
পেজ সূচিপত্র: শিশুর পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া বন্ধ করার সম্পর্কে বিস্তারিত ত্যথ দেওয়া হল:
- পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া কি?
- শিশু-কিশোরদের মধ্যে ডায়রিয়া লক্ষণ
- পানিশূন্যতা ও পানিশূন্যতার লক্ষণ সমূহ
- পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া কেন হয়?
- পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে কি করনীয়
- শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয়
- ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়
- পানিশূন্যতা কিভাবে পূরণ করা যায়
- খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর নিয়ম
- খাবার স্যালাইন তৈরি করবেন যেভাবে
- খাবার স্যালাইন তৈরিতে বিশেষ সর্তকতা
- পানিশূন্যতা বা ডায়রিয়ায় করণীয়
- শিশুর ডায়রিয়া হলে যা খাওয়ানো ভালো
- শিশুর ডায়রিয়া হলে যা খাওয়ানো উচিত না
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া কি
সাধারণত ২৪ ঘন্টার মধ্যে তিনবার বা তার বেশি পানির মতো পাতলা পায়খানা হলে তাকে
ডায়রিয়া বলে। এক্ষেত্রে তিনবারের কম হলে ভয়ের কিছু নেই। পাতলা পায়খানা বা
ডায়রিয়ার কারণে শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে। গবেষণায় দেখা গেছে নিম্ন আয়ের
দেশগুলোতে ৩ বছর বয়সী শিশুরা বছরে প্রায় তিনবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়।
শিশু-কিশোরদের মধ্যে ডায়রিয়ার লক্ষণ
- ঘনঘন পিপাসা পাওয়া
- স্বাভাবিকের চেয়ে কম প্রস্রাব হওয়া। একটানা ৩ ঘন্টা বা তার বেশি সময় ধরে প্রস্রাব না হওয়া।
- শারীরিক দুর্বলতা
- মুখ শুষ্ক দেখানো
- শিশুর কান্নার সময় চোখে পানি না থাকা
- ত্বক কুঁচকে যাওয়া
পানিশূন্যতা ও পানিশূন্যতা লক্ষণ সমূহ
ডায়রিয়া হলে পায়খানা ও বমির পাশাপাশি মূত্র ও ঘামের সাথে শরীরের থেকে
সোডিয়াম, ক্লোরাইড, পটাশিয়াম এবং বাইকার্বনেট বের হয়ে যায়। এর ঘাটতি পুরো নাম
হলে দেখা দেয় পানিশূন্যতা। পানি শূন্যতা খুব বেশি হলে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে
পারে।
পানিশূন্যতার লক্ষণসমূহ
- ঘনঘন পিপাসা পাওয়া
- মুখ, জিব্বা ও গলা শুকিয়ে যাওয়া
- স্বাভাবিকের চেয়ে কম প্রস্রাব হয় অথবা একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- গাঢ় বর্ণ বৈশিষ্ট্য প্রস্তাব প্রস্রাব হওয়া
- ক্লান্ত বোধ হওয়া
- চোখ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চোখের কোটরে ঢুকে যাওয়া
- শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়, দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস হয়, নাড়ি খুব দ্রুত এবং ক্ষীণ হয়ে যাওয়া
- রোগী নিস্তেজ ও অসার হয়ে যায় এবং কখনো কখনো পেট ফুলে যাওয়া দেখা দিতে পারে
- ত্বকের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া বা কুচকে যাওয়া। রোগীর শরীরের চামড়া টেনে ছেড়ে দিলে দুই
- সেকেন্ডের মধ্যে যদি পূর্বের মতো না হয়ে কুচকে থাকে বুঝতে হবে রোগীর পানি শূন্যতা খুব বেশি।
- চোখে ঝাপসা দেখা
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া কেন হয়?
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। মূলত জীবাণু সংক্রমিত হলে
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হয়ে থাকে-
- ভাইরাসজনিত যেমন: রোটা ভাইরাস, এস্ট্রো ভাইরাস, এডেনোভাইরাস ইত্যাদি।
- ব্যাকটেরিয়াজনিত যেমন: সালমোনেলা, সিগেলা, ইকলাই, ভিব্রিও কলেরা, ক্যামপালোব্যাকটর, ইত্যাদি।
- পরজীবীজনিত যেমন: জিয়ারদিয়া, ক্রিপটোসপরিয়ামডি, সাইক্লোসপরা ইত্যাদি।
- দূষিত পানি পানের মাধ্যমে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া ছড়ায়।
- দূষিত খাবার বা পচা বাসি খাবার খেলে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হয়েথাকে।
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করলে বা ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলেও পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হতে পারে।
- কিছু ঔষধ যেমন: ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ অ্যান্টাসিড, বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক, জোলাপ ইত্যাদি দীর্ঘ স্থায়ী ডায়রিয়ার হওয়ার কারণ হতে পারে।
- এছাড়া ও দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন, খাদ্য হজম না হওয়া, অন্তের কৃমি ইত্যাদি কারণে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হতে পারে।
- এছাড়াও ভ্রমণের সময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ হতে খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে কি করনীয়
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। পানি শূন্যতা
তীব্র হলে তা শিশু-কিশোরদের জন্য বেশ বিপদজনক হতে পারে। ডায়রিয়া হলে যথাসম্ভব
দ্রুত কিছু ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী যেমন:
- শরীর থেকে যতটা লবণ ও পানি বেরিয়ে যাচ্ছে তা পূরণ করা। এজন্য রোগীকে বারেবারে খাবার স্যালাইন সহ তরল খাবার খাওয়ানো। এছাড়া যে কারণে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হয়েছে তার চিকিৎসা করা।
- যতবার পাতলা পায়খানা বা বমি হবে ততবারই সমপরিমাণ খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর একান্ত জরুরী।
- রোগীকে স্বাভাবিক ও পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হবে।
শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয়
শিশুদের ডায়রিয়া হলে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
এছাড়া শিশুদের মধ্যে নিম্নোক্ত উপসর্গগুলি দেখা গেলে সরাসরি একজন ডাক্তারের
পরামর্শ নেয়া উচিত।
- ডায়রিয়া যদি দুই দিনের বেশি থাকে
- বারবার বমি হওয়া
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৬ বার বা তার বেশি পাতলা পায়খানা হওয়া
- ১০২° ফারেনহাইট বা তার বেশি জ্বর থাকা
- তলপেটে বা মলদ্বারে গুরুতর ব্যথা অনুভব করা
- মলের সাথে যদি রক্ত বের হওয়া এবং মলের রং যদি কালো হয়
- পানি শূন্যতার লক্ষণ দেখা দেওয়া
ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়
ডায়রিয়া কখনো কখনো মারাত্মক আকার ধারণ করলেও কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে খুব
সহজেই ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা যায়।
- শিশুদের জন্মের ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো
- সম্ভব হলে রোটা ভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্রহণ করা
- স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা, বিশেষ করে সংক্রমণ রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা
- যদি ডায়রিয়া বা বমি শুরু হয় তাহলে তৎখানেক খাবার স্যালাইন খাওয়া শুরু করা এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া
- বাইরের খোলা নোংরা ও বাসি খাবার দাবার পরিহার করা
পানি শূন্যতা কিভাবে পূরণ করা যায়
ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ লবণ ও পানি বের হয়ে যায়। ফলাফল হিসেবে,
শরীরে দেখা দেয় পানি শূন্যতা। শরীরে পানি শূন্যতা মেটানোর জন্য যত সম্ভব দ্রুত
দুটি পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে-
- খাবার স্যালাইন খাওয়ানো
- শিরাপদে কলেরা স্যালাইন প্রয়োগ করা
রোগীর বেশি পানি শূন্যতা হলে অথবা খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর পরেও যদি পানি
শূন্যতা না কমে সেক্ষেতপরে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শিরার মধ্যে স্যালাইন
দিয়ে পানি শূন্যতা পূরণ করতে হবে।
খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর নিয়ম
ডায়রিয়া শুরু হওয়ার সাথে সাথে খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর শুরু করতে হবে।
এক্ষেত্রে দেরি হলে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে। পাতলা পায়খানা ও বমির
পরিমাণ মোটামুটি আন্দাজ করে কমপক্ষে সে পরিমাণ স্যালাইন খাওয়ানো উচিত।
ডায়রিয়া হলে যেহেতু বমির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে বমি হলেও
স্যালাইন খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। অনেক সময় স্যালাইন খাওয়া মাত্রাই বমি হতে
পারে এক্ষেত্রে অল্প অল্প পরিমানে স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
যতদিন পর্যন্ত পাতলা পায়খানা চলতে থাকবে ততদিন পর্যন্ত স্যালাইন খাওয়ানো বন্ধ
করা যাবে না। তবে দুই দিনের বেশি ডায়রিয়া হলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা
জরুরি। শিশুদের ক্ষেত্রে অল্প অল্প করে চামচ দিয়ে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। তবে
শিশুকে শোয়ানো অবস্থায় পানি, দুধ বা স্যালাইন খাওয়ানো যাবে না। শিশুকে কোলে
নিয়ে অথবা মাথা কিছুটা উঁচু করে খাওয়াতে হবে।
বাজার হতে প্যাকেট স্যালাইন কিনে স্যালাইন তৈরি করলে তা বারো ঘন্টা পর্যন্ত
খাওয়ানো যায়। এক্ষেত্রে প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশনা অনুযায়ী স্যালাইন
বানাতে হবে ও খাওয়াতে হবে। তবে বাড়িতে তৈরি কি তোর স্যালাইন মাত্র ৬ ঘন্টা
পর্যন্ত খাওয়ানো যায়।
স্যালাইন খাওয়ানোর পরও যদি রোগীর অবস্থা খারাপ হয়, যেমন পেট ফুলে যাওয়া,
প্রস্রাব কমে যাওয়া, বা বন্ধ হয়ে যাওয়া, নিস্তেজ হয়ে পড়া, শ্বাসকষ্ট বা
হাত-পা খিচুনি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে রোগীকে নিকটস্থ চিকিৎসা কেন্দ্রে
নিয়ে যেতে হবে।
খাবার স্যালাইন তৈরি করবেন যেভাবে
রোগীকে যে কয় ধরনের স্যালাইন খাওয়ানো যায় তার মধ্যে লবণ-গুড় স্যালাইন প্যাকেট
স্যালাইন,( ওরাল স্যালাইন) এবং চালের গুড়ার স্যালাইন উল্লেখযোগ্য।
লবণ-গুড়ের স্যালাইন
একটি পরিষ্কার পাত্রে আধা লিটার(৫০০) পরিষ্কার বা ফুটনো ঠান্ডা খাবার পানির সাথে
তিন আঙ্গুলের (বৃদ্ধাঙ্গুল, তর্জনী ও মধ্যমার প্রথম ভাজ বা দাগ পর্যন্ত) এক চিমটি
লবণ এবং এক মুঠো গুড় অথবা চিনি পরিষ্কার চামচ দিয়ে মিশাতে হবে। বাড়িতে বানানো
এই স্যালাইন ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত খাওয়ানো যাবে।
প্যাকেট স্যালাইন:
বর্তমানে খাবার স্যালাইন প্যাকেটে তৈরি অবস্থায় বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
প্যাকেটের নির্দেশ অনুসারে আধা লিটার (৫০০) পরিষ্কার/ফুটানো ঠান্ডা খাবার পানিতে
এক প্যাকেটের সবটুকু গুড়া ভালোভাবে মিশিয়ে খাওয়ার স্যালাইন তৈরি করা যায়। এই
স্যালাইন সাধারণত ১২ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। এরপর প্রয়োজন হলে পুনরায়
স্যালাইন বানাতে হবে। ১২ ঘণ্টার পার হয়ে গেলে স্যালাইন খাওয়ানো যাবে না।
চালের গুড়ার স্যালাইন:
- একটি পরিষ্কার পাত্রে চা চামচের পাঁচ চামচ চালের গুড়া নিতে হবে। চালের গুড়া না থাকলে এক মুঠো চাল ১০/১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে তারপর পিষে নিন (বাড়িতে মশলা প্রেসার সিল পাটা ব্যবহার করলে তা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে যেন ঝাল বা মসলা না থাকে) অথবা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। এবার চালের গুড়োকে আধা কেজি বিশুদ্ধ পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- এখন আরো আধা কাপ বিশুদ্ধ পানি মেশান। চুলায় জ্বালানোর সময় বাষ্প হয়ে কিছুটা পানি কমে যাবে বিধায় এই বাড়তি পানি মেশাতে হবে।
- এবার চালের গুড়া মেশানো পানিকে চুলায় ৭ থেকে ১০ মিনিট গরম করুন। গরম করার সময় অনবরত নাড়তে থাকুন। ফুটে উঠলে অর্থাৎ বুধ বুধ দেখা দিলেই পাত্রটির নামিয়ে ফেলুন।
- তারপর ঠান্ডা করে এক চিমটি লবণ মিশাতে হবে।
- তৈরিকৃত এই চালের গুড়ার স্যালাইন ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত খাওয়ানো যাবে। তারপর প্রয়োজনে পুনরায় স্যালাইন তৈরি করতে হবে।
- আজকাল ওষুধের দোকানগুলোতে প্যাকেটজাতকৃত রাইস স্যালাইন পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে প্যাকেটের গায়ে লেখা নিয়মাবলী অনুযায়ী স্যালাইন তৈরি করতে হবে ও খাওয়াতে হবে।
ডায়রিয়াজনিত অসুখের কারণে শরীর হতে প্রচুর পরিমাণ এর পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়
এবং রোগী পানি শূন্যতায় ভোগে। এরপর সঠিক মাপের পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণ করা না
হলে রোগী মারাত্মক কিডনিজনিত অসুখের মধ্যে পড়ে যায়। পরবর্তীতে যা জীবনের প্রতিও
হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।
খাবার স্যালাইন তৈরিতে বিশেষ সর্তকতা
খাবার স্যালাইন তৈরি সময় বিশেষ কিছু জরুরি বিষয়ে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন:
সাধারণত খাবার স্যালাইন (রাইস স্যালাইন নয় কিন্তু) তৈরীর জন্য স্বাভাবিক
তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করতে হবে। ফুটন্ত পানিতে স্যালাইন গলা যাবে না এমনকি
তৈরি করা স্যালাইন ফুটিয়ে গরম করে নেওয়া উচিত নয়।
স্যালাইন তৈরি সমস্ত জিনিসপত্র এবং যিনি তৈরি করবেন তার হাত সাবান পানি দিয়ে
ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
তৈরি করা স্যালাইন পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। স্যালাইন
সংরক্ষণের নিয়ম জানতে স্যালাইনের প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশনা মেনে চলুন।
একবার তৈরি করা স্যালাইনের অবশিষ্ট অংশে নতুন করে পানি কিংবা স্যালাইন প্যাকেটের
পাউডার যোগ করা যাবে না। প্রয়োজনে আগের ব্যবহারিত স্যালাইন ফেলে দিয়ে নতুন করে
তৈরি করুন।
মনে রাখবেন যে, খাবার স্যালাইন একটি জীবন রক্ষাকারী ঔষধ। এর সঠিক ব্যবহার না হলে
তা জীবন রক্ষার পরিবর্তে মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বুকের দুধ বার
বার খাওয়াতে হবে। শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই।
পানি শূন্যতা বা ডায়রিয়ায় করণীয়
সঠিক নিয়মে খাবার স্যালাইন বা রাইস স্যালাইন তৈরি করুন। অবশ্যই প্যাকেটের নিয়ম
অনুযায়ী পানি ও স্যালাইন মিশাবেন। কম বা বেশি মেশাবেন না। এতে করে শিশুর সমস্যা
দেখা দিতে পারে। রোগীকে বারেবারে বেশি বেশি খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
স্বাভাবিক সকালের খাবার খেতে দিন। গরম গরম টাটকা খাবার খাওয়ান। বাইরের জুস বা
আখের রস ইত্যাদি পরিহার করুন। বাচ্চা যদি বুকের দুধ খায়, কখনো তা বন্ধ করবেন না।
অনেকেই খাবার বন্ধ করে দেয় পায়খানা বেশি হবে বলে। যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বেশি
বেশি খাবার রোগীকে দ্রুত সুস্থ করে তোলে। তাই পারলে রোগীকে বেশি বেশি পুষ্টিকর
খাবার খাওয়াবেন।
অনেকের ধারণা স্যালাইন খাওয়ালে ঠান্ডা লেগে যাবে। এটিও সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। পানি
শূন্যতার সময় রোগীর একমাত্র বাঁচার উপায় হল বেশি বেশি খাবার স্যালাইন খাওয়া।
ডায়রিয়াতে পেট ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। এজন্য অনেকেই অ্যাসিডিটির ওষুধ খেয়ে
থাকেন। কিন্তু সত্যি বলতে এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই ডায়রিয়া বেড়ে যেতে পারে।
ডায়রিয়া সেলফ লিমিটিং অর্থাৎ নিজে নিজে ভালো হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। তাই পানি
শূন্যতা পূরণ করা ছাড়া অন্য ওষুধ সাধারণত দরকার হয় না। তাই সেলাই নিয়ে একমাত্র
জীবন রক্ষাকারী ওষুধ জেনে রাখুন।
একান্তই কোন ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হলে অবশ্যই একজন রেজিস্টার চিকিৎসকের
পরামর্শ নিন।
শিশুর ডায়রিয়া হলে যা খাওয়ানো ভালো
প্রচুর শক্তির সমৃদ্ধ খাবার:
- চর্বি, দই আর সিরিয়ালের মত প্রচুর শক্তি সমৃদ্ধ খাবার বেশি উপকারী। এগুলো ডায়রিয়ার সময়ও বেশ ভালই শোষণ হয় আমাদের শরীরে।
- তাই অল্প অল্প করে, সুলভে পাওয়া যায় এমন উচ্চশক্তি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো যেতে পারে।
- আপনার শিশুকে বারবার খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে।চাইলে ভাত বা রুটির সাথে সামান্য ভেজিটেবল অয়েল মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
- যাতে খাবারের শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার:
যেসব খাবারে পটাশিয়াম বেশি সেগুলো খাওয়া খুবই জরুরী, কারণ এতে করে ডায়রিয়ার
কারণে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া পটাশিয়াম আবার পুণস্থাপিত হবে।
মসুর ডাল, কলা, আম, আনারস, পেঁপে, নারিকেলের দুধ এবং টক জাতীয় ফলের মধ্যে আছে
প্রচুর পটাশিয়াম।
প্রোবায়োটিক:
- পরিপাকতন্ত্রকে ডায়রিয়াজনিত সংক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করতে একটা চমৎকার কন্ঠ হলো প্রোবায়োটিক। এই পথ্যে জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া থাকে,
- যা ক্ষতি কারক ব্যাকটেরিয়া সাথে প্রতিযোগিতা করে তাদের খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টি করে। এতে করে সংক্রমণ জীবাণু গুলো মরে যায়। দুই একটি প্রোবায়োটিক।
- এছাড়া ডাক্তারের পরামর্শে ফার্মেসি থেকেও কিনে প্রোবায়োটিক খাওয়াতে পারে
- শিশুর ডায়রিয়া হলে যা খাওয়ানো উচিত না
- ডায়রিয়ার সময় কিছু কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এর মধ্যে রয়েছে,
- প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার যেমন তুলনামূলক শক্ত ফল বা শাকসবজি।
- বেশি মসলা দেওয়া খাবার দেওয়া একেবারে উচিত না।
- অতিরিক্ত চিনি দেওয়া খাবার ও ডায়রিয়া কে বাড়িয়ে দিতে পারে।
- মায়ের দুধ ব্যতীত অন্য কোন দুধ সরাসরি না খাওয়ানোই ভালো, দইয়ের মত দুগ্ধ জাত খাবার দেওয়া যেতে পারে।
ডায়রিয়ায় শরীর প্রচন্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় তাই শরীরে শক্তি ফিরিয়ে
আনাটা জরুরী। সে কারণে স্যালাইন অন্যান্য তরলের পাশাপাশি যথাযথ শক্ত খাবার খেতে
থাকাটাও জরুরী। তাতে দ্রুত শক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url