ইসলাম ও ঈমান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-হাদিস অনুযায়ী


প্রিয় পাঠক আপনি কি ইসলাম ও ঈমান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। আজকে আমরা ইসলাম ও ঈমান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি। শুনুন তাহলে দেরি কেন দেখে নেওয়া যাক আজকের বিষয় ইসলাম ও ঈমান সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তথ্য। ইসলাম ও ঈমান সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো:

পেজ সূচিপত্র: ইসলাম ও ঈমান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-হাদিস অনুযায়ী

ইসলাম অর্থ কি?

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন-ইন্নাদ দ্বীনা ইনদাল লাহী লইসলাম।

অর্থ: (আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন হলো একমাত্র ইসলাম)।

পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরীফের আইন কাননে বলা হয় আল্লাহর দ্বীন বা ইসলাম। এটা আল্লাহর দেওয়া শান্তির পথ। এই দ্বীন বা ইসলাম ত্যাগ করে যদি কেউ নিজের ইচ্ছামত কিংবা ইসলাম অসমর্থিত কোন সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী চলে, তবে তা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।

ইবাদত কাকে বলে?

ইবাদতের অর্থ দাসত্ব বা গোলামী করা। ইসলামে যাবতীয় আদেশ নির্দেশ যখন মেনে চলা হয় তখন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর হুকুম মতোই পালন করা হয়। আর একেই বলা হয় 'ইবাদত' বা আল্লাহর দাসত্ব। আল্লাহর ইবাদতের ফলে মানুষ তার কাজকর্মে, আমলে -আখলাকে ধন্য হয়। আর সকল মানুষ যখন আল্লাহর ইবাদত বা দাসত্ব গুণে‌ প্রকৃত অর্থই মানুষে পরিণত হয়,তখন তাদের সমাজ ও রাষ্ট্রী শান্তি সমৃদ্ধি নেমে আসে। তাই আল্লাহ পাক মানুষের জন্য ইবাদত ফরজ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন-আমি জিন ও মানুষকে শুধু আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।

ঈমান কাকে বলে?

আল্লাহতালা কে একমাত্র প্রভুরূপে মেনে নেওয়া এবং তার প্রেরিত রাসূলকে জীবনের একমাত্র আদর্শ নেতা হিসেবে গ্রহণ করার নাম ঈমান।

আল্লাহর হুকুম বাস্তব জীবনের কখন কিরূপ মেনে চলতে হয়, রাসূল (সা:) সমগ্র মানবজাতিকে তার জীবন ভর দেখিয়ে গেছেন। আল্লাহর প্রতিটি আদেশ নির্দেশ কখনো কথা দিয়ে, কখনো আমল করে, আবার কখনো সাহাবীদের কাজকে সমর্থন জানিয়ে তিনি মানুষের জন্য বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন।

মোটকথা, রাসূল (সা:) আমাদের কাছে আল্লাহর পরিপূর্ণ ইবাদতের আদর্শ হয়ে আছেন। আল্লাহ পাক তাকে নবুয়াত দান করে মানবজাতির জন্য আদর্শ হিসেবে পেশ করেছেন এবং তার আনুগত্য অনুসরণ ফরজ করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় আল্লাহ যেমন আমাদেরকে ভালোবাসেন, তেমনি হযরত নবী (সা:) ও আমাদেরকে ভালোবাসেন।

তিনি আমাদেরকে এত দূর ভালবাসেন যে, একজন উম্মত অবশিষ্ট থাকতেও তিনি জান্নাতে যাবেন না।

হযরত (সা:)-এর অনুগত্য অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ পাকের ইবাদত করায় আমাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। তাই আল্লাহ আমাদের মাবুদ-আমাদের মাকসুদ-আমাদের খালেক ও মালেক তিনি আমাদের প্রভু। আর হযরত নবী (সা:) আমাদের আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর একমাত্র উসিলা- একমাত্র মাধ্যম -একমাত্র মহসিন -একমাত্র আপনজন। তাই কালেমায়ে তাইয়েবা আমরা ঘোষণা করি: (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ)।

অর্থ: "আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, মহানবী (হযরত) মুহাম্মদ (সা:)আল্লাহর রাসূল"।

এর অর্থ হল, আমরা আল্লাহকে খুশি করার জন্য একমাত্র তারই গোলামী করি। তারি আইন-কানুন মেনে চলি এবং গোলামী বা আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে হযরত নবী (সা:)-এর তরিকায় আমাদের একমাত্র তরিকা।

মহানবী হযরত (সা:) আল্লাহ এবং আল্লাহর প্রেরিত পূর্ববর্তী রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে তার প্রেরিত আসমানী কিতাব, ফেরেশতা, তাকদীর পুনরুত্থান দিবস এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করাও ফরজ বলে ঘোষণা করেছেন। এ বিষয়গুলো ঈমানের মুচমালের সংক্ষিপ্ত ও ঈমানের মুফাসসালের বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।

ঈমানের মুজমাল অর্থ কি


মুজমাল অর্থ সংক্ষিপ্ত। ঈমানের মুলমাল কালেমায়ে ঈমানের যাবতীয় বিষয়বস্তু সংক্ষিপ্ত আকারে বলা হয়।

আর এ সবই ঈমানের মূল বিষয়। আল্লাহ এবং রাসূল (সা:)-এর যাবতীয় কথাই আমরা সত্যি বলে বিশ্বাস করি,সে অনুযায়ী আমল করাকেই আল্লাহকে খুশি করার উপায় বলে একিন করি। কিন্তু এসব কিছুর মূলে যে কথা নিশ্চিত সত্য বলে বিশ্বাস করি তা হলো আল্লাহর যত নাম ও গুণ রয়েছে অর্থাৎ যে অনন্ত শক্তি, ক্ষমতা ও গুণাবলীর তিনি মালিক,

তা সবকিছু সত্য জেনেই সেই অদ্বিতীয় লা শরীক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম এবং তার যত আদেশ নির্দেশ ও হুকুম আহকাম রয়েছে তাও মানার জন্য শিরোধার্য করে নিলাম। ঈমানের এই সংক্ষিপ্ত রুপা সারমর্মকে বলা হয় ঈমানের মুজমাল বা মূল ইমান। মূল ইমানের কথাগুলো এই-আমানতু বিল্লাহি কামা হুয়া বিআসমাইহী ওয়া সিফাতিহি ওয়াকাবিলতু জামী'আ আহকামিহী ওয়া আরকানিহী।

অর্থ: "আল্লাহু যেমন তার নাম ও গুণাবলীর সাথে আছেন তেমনি ভাবেই তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম এবং তার যাবতীয় হুকুম শিরোধার্য করে নিলাম।"


ঈমানে মুফাসসাল অর্থ কি?


'মুফাসসাল' অর্থ 'বিস্তারিত'। ঈমানের যে কথা ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে বলা হয় তাই ঈমানের বিস্তারিত রূপ। ঈমানের এই কথাগুলো নিম্নরূপ-আমানতু বিল্লাহি ওয়া মালাইকাতিহী ওয়া কুতুবিহী ওয়া রাসুলিহী ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি ওয়াল কাদরী খাইরিহী শাররিহী মিনাল্লাহি তা'আলা ওয়াল বা'ছি বা'দল মাউত।

অর্থ:"আমি ঈমান আনলাম আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাব সমূহের প্রতি, তার রাসূলদের প্রতি, শেষ দিবসের প্রতি, তাকদিরের প্রতি-এই বিশ্বাসের সাথে যে, ভালো-মন্দ উভয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে এবং মৃত্যুর পরবর্তী উত্থান বা কিয়ামতের প্রতি।"

এই ঈমানের মাধ্যমে একজন মুমিন বান্দা এক কথায় বিশ্বাস করে যে, আল্লাহই আমার একমাত্র রব, প্রভু, তিনিই আমার সৃষ্টিকর্তা এবং লালন পালনকারী, তার হুকুমেই শিরোধার্য, তার সন্তুষ্টি এবং দিদারই আমার শেষ লক্ষ্য।

তিনি তার অনন্ত অসীম বিশ্ব- জগতের পরিচালনা অগণিত নিষ্পাপ ফেরেস্তা নিয়োজিত রেখেছেন। মানুষের মত তার প্রিয়তম সৃষ্টির হেদায়েতের জন্য শত সহস্র আসমানী কিতাব বা সহীফা নাযিল করেছেন।

কি করে তার স্নেহ ধন্য মানবজাতি তার কিতাব অনুযায়ী আমল করে প্রিয় বান্দায় পরিণত হবে, তাই আমাদের মধ্যে হতে তাদের মাঝে অসংখ্য অগণিত পয়গম্বর পাঠিয়েছেন।

মৃত্যু অন্তে ইহজগতের সব মানুষের ভালো মন্দ সকল কাজের চিরন্তন পুরস্কার বা শাস্তি দেওয়ার জন্য তিনি আখিরাত বা পরলোক সৃষ্টি করেছেন। বড়লোকের জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই।

অতঃপর একজন মুমিনকে আরো বিশ্বাস করতে হবে, দুনিয়া যেহেতু পরীক্ষার ক্ষেত্র, তাই আল্লাহপাক মানুষকে এই দুনিয়ায় ভালো-মন্দ সব কাজের সুযোগ দান করেন। সে ভালো-মন্দ যাই করতে চাই করতে পারে। তার কোন কাজে কোন বাধা সৃষ্টি করা হয় না এবং এমনই সুযোগ পেয়ে সে ভালো-মন্দ যাই করে, আল্লাহ পাক সর্বজ্ঞ জ্ঞান ও অনন্তযামী হিসেবে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবকিছুই জানেন- অতএব বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

সে আরও বিশ্বাস করতে হবে, দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে এমন এক সময় আসবে, যখন ভালো-মন্দ সব কাজের হিসাব এবং হিসাবঅনতে ভালো কাজের জন্য জান্নাতে আর মন্দ কাজের জন্য জাহান্নামে প্রেরণের উদ্দেশ্যে তাকে পুনরায় জীবিত করে বিচারের নিমিও আল্লাহর সামনে উপস্থিত করা হবে।

বস্তুত ঈমানের মুফাসসালের এই সাতটি কথার ওপর ইমান আনার পর কোন মুমিন বান্দাই আল্লাহর অসন্তুষ্টির পথে চলতে পারে না; বরং পথে পথেই সেই আল্লাহ তায়ালাকে হাজির-নাজির জেনে তার সন্তুষ্টির পথে চলার জন্য তৈরি হয়ে যায়। সাহাবায়ে কেরাম (রা:)-এর মতে সোনার মানুষ হওয়ার জন্য পাগলপারা হয়ে ওঠে। আল্লাহ পাকের দিদার লাভের উদ্দেশ্যে হযরত রাসূল (সা:)-এর আনুগত্য অনুসরণ করে জীবনকে ধন্য করার জন্য উম্মত হয়ে পড়ে।

লেখক এর শেষ মন্তব্য


প্রিয় পাঠক আপনি যদি আমাদের আজকের পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তাহলে আপনি ইসলাম ও ঈমান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারেছেন। এরকম আরো নিত্যনতুন পোস্ট দেখতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url