মহিলাদের সুন্নত সম্মত উপায়ে নামাজ আদায়ের নিয়ম

আপনি কি মহিলাদের সুন্নত সম্মত উপায়ে নামাজ আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার উপকারে আসবে। আমরা আজকে মহিলাদের সুন্নত সম্মত উপায়ে নামাজ আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ইসলামের প্রসিদ্ধ পঞ্চ বেনার মধ্যে নামাজ দ্বিতীয় বেনা বা খুঁটি। ঈমানের পরেই নামাজের স্থান। ইসলামে ফরজ ইবাদতের মধ্যে সর্ব প্রধান হলো নামাজ। আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন আমি জিন ও মানব জাতিকে শুধু আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি (সূরা যারিয়াত:৫৬ আয়াত)।



পেজ সূচিপত্র: মহিলাদের সুন্নত সম্মত উপায়ে নামাজ আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:


মহিলাদের সুন্নত সম্মত উপায়ে নামাজ আদায়ের নিয়ম

মহিলাদের সুন্নত সম্মত উপায়ে নামাজ আদায়ের নিয়ম


মহিলাদের সুন্নত সম্মত উপায়ে নামাজ আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হল:

  1. মহিলাগন নামাজ আরম্ভ করার পূর্বে তাদের চেহারা, হাত এবং পা ব্যতীত সম্পূর্ণ শরীর কাপড় দ্বারা ঢেকে আছে এই বিষয়ে নিশ্চিত হবেন। কোন কোন মহিলা এভাবে নামাজ পড়েন যে, তাদের চুল খোলা থাকে, কারো কব্জি খোলা থাকে, কোন মহিলার কান খোলা থাকে, কোন মহিলা এত ছোট ওড়না ব্যবহার করেন যে চুল লটকান অবস্থায় দেখা যায়।
  2. এসব পদ্ধতি নাজায়েজ। আর নামাজ পড়া অবস্থায় চেহারা হাত এবং পা ব্যতীত শরীরের যে কোন অঙ্গের এক চতুর্থাংশ পরিমাণ এতক্ষণ সময় যদি খোলা থাকে, যে সময় তিনি বার সুবহানাল্লাহ রাব্বিল আজিম বলা যায়, তাহলে নামাজ হবে না। আর এর চেয়ে কম খোলা থাকলে নামাজ হয়ে যাবে বটে কিন্তু গুনাহ হবে।
  3. মহিলাদের জন্য বারান্দায় নামাজ পড়ার চেয়ে ঘরের মধ্যে নামাজ পড়া উত্তম।
  4. মহিলাদের নামাজ আরম্ভ করতে হাত কাধ পর্যন্ত এবং হাত ওড়নার ভেতরে রেখে উঠাবেন ওড়নার বাইরে হাত বের করবেন না।
  5. মহিলারা হাত বুকের ওপর এভাবে বাঁধবেন, যেন প্রথমে বাম হাত বুকে রাখার পর বাম হাতের ওপর ডান হাত রাখতে হবে।
  6. রুকুতে মহিলাদের পুরুষের মতো কোমর একেবারে সোজা করা জরুরী নয়। তারা পুরুষের তুলনায় কম ঝুকবেন।
  7. রুকু অবস্থায় পুরুষগণ আঙ্গুল হাঁটুর ওপর খোলা রাখবেন। কিন্তু মহিলারা মিলিয়ে রাখবেন। অর্থাৎ আঙ্গুল সমূহের মধ্যে যেন ফাঁকা না থাকে।
  8. মহিলাগণ রুকুতে পা একেবারে সোজা রাখবেন না বরং হাঁটুর সামনের দিকে কিছু বাঁকা করে রাখবেন।
  9. পুরুষের জন্য রুকুতে নিজ বাহুর পাশে হতে পৃথক এবং উঁচিয়ে রাখাই হুকুম। কিন্তু মহিলাগণ বাহুদ্বয় এভাবে খাড়া রাখবেন যেন পাসের সঙ্গে মিলে থাকে।
  10. মহিলাদের উভয় পা মিলিয়ে দাঁড়ানো উচিত। বিশেষত টাখনুদয় মিলিয়ে রাখতে হবে। উভয় পায়ের মধ্যখানে যেন ফাঁকা না থাকে।
  11. সেজদায় যাওয়ার সময় পুরুষদের জন্য যে পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত হাঁটু জমিনের ওপর না লাগে ততক্ষণ সিনা ঝুকাবেন না, কিন্তু মহিলাদের জন্য এ পদ্ধতি নয়, তারা প্রথম থেকে সিনা ঝুকিয়ে সেজদায় যাবেন।
  12. মহিলা গন সেজদা এভাবে করবেন যেন তাদের পেট রানের সঙ্গে একেবারে মিলে যায় এবং বাহু পাসে সাথে মিলে থাকে। মহিলারা পা খারা করার পরিবর্তে ডান দিকে বের করে বিছিয়ে দেবেন।
  13. দুই সেজদার মাঝখানে এবং আত্তাহিয়্যাতু পড়ার জন্য যখন বসবেন তখন মহিলারা বাম কোমরের ওপর বসবেন এবং পাদয় ডানদিকে বের করে দিয়ে ডান পায়ের গোছা বাম পায়ের গোছার ওপর রাখবেন।
  14. পুরুষদের জন্য রুকুতে হাতের আঙ্গুল খোলা এবং সেজদায় মিলিয়ে রাখার আর অন্যান্য কাজ আদায় করার সময় আপন অবস্থার ওপর ছেড়ে দেওয়ার হুকুম রয়েছে। কিন্তু মহিলাদের জন্য রুকু সেজদা ও দুই সেজদার মাঝখানে বসা এবং সর্বাবস্থায় আঙ্গুল মিলিয়ে রাখার হুকুম রয়েছে। অর্থাৎ তারা মাঝখানে ফাঁকা রাখবেন না।
  15. মহিলাদের জন্য জামায়াত করা মাকরূহ। তারা একাকী নামাজ পড়ায় উত্তম। অবশ্য কোন মাহরাম ব্যক্তি যদি ঘরে জামায়াত করেন তখন জামায়াতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু এই অবস্থায় মহিলাদের পুরুষদের একেবারে পেছনে খাড়া হওয়া জরুরি, পুরুষদের পাশে কখনো দাঁড়াবেন না।

পুরুষ ও মহিলাদের নামাজের পার্থক্য


পুরুষ ও নারীর নামাজের পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ ও নারীর নামাজের মৌলিক নিয়ম গুলো একই হলেও শারীরিক গঠনের কারণে এবং শালীনতা বজায় রাখার জন্য ইসলাম নারীদের নামাজে কিছু পরিবর্তন বা পার্থক্য প্রবর্তন করেছে। নিচে পুরুষ ও নারীদের নামাজের পার্থক্য গুলো উল্লেখ করা হলো:

১.হাত বাধার অবস্থান

পুরুষদের জন্য: পুরুষরা কিয়াম দাঁড়ানোর সময় অবস্থায় হাত বুকের নিচে বাপ পেটের ওপর বাঁধবে।

নারীদের জন্যঃ নারীরা বুকের ওপর হাত বাঁধে। ডান হাত বাম হাতের ওপরে রাখে হয়।

২.রুকু(নত হওয়া)

পুরুষদের জন্য: রুকুতে পুরুষরা কোমর সম্পূর্ণভাবে সোজা করে, এবং হাতগুলো হাটুর উপর রাখে হয়।

নারীদের জন্য: নারীরা রুকুতে হাত সামান্য বাকিয়ে হাঁটুর ওপর রাখে এবং বেশি না ঝুকে কম ঝুঁকে থাকে। তারা পুরুষদের তুলনায় কম সোজা হয় এবং শরীরকে আরো সংকুচিত রাখে

৩.সিজদা

পুরুষদের জন্য: পুরুষরা সিজদার সময় তাদের হাত এবং কনুই শরীর থেকে দূরে রাখে, যেন তাদের শরীর খোলা থাকে। তারা পা সামান্য ফাঁকা করে সেজদা করেন।

নারীদের জন্য: নারীরা সেজদা করার সময় হাতগুলো শরীরের সাথে লাগিয়ে রাখে এবং বেশি সংকুচিত ভাবে সেজদা করে। নারীদের জন্য পা একসাথে করে সেজদা করা নির্দেশনা রয়েছে।

৪.বসার ধরন

পুরুষদের জন্য: পুরুষরা কায়দাবা বসার সময় ডান পা খারা রাখে এবং বাম পায়ের উপর বসে।

নারীদের জন্য: নারীরা ডান পা গুটিয়ে বসে এবং বাম বা শরীরের নিচে করে রাখে অর্থাৎ শরীলকে আরো সংকুচিত রাখে।

৫.আওয়াজের পার্থক্য

পুরুষদের জন্য: পুরুষরা জামাতে নামাজ পড়লে উচ্চ সরে তেলাওয়া করে (ফজর, মাগরিব ও এশার প্রথম দুই রাকাতে)।

নারীদের জন্য: নারীরা নামাজে সব সময় নিচু স্বরে তেলাওয়াত করবে। এমনকি জামাতে হলেও নারীরা উচ্চস্বরে পড়বে না, বরং খালিসা মনে করবে।

৬.শরীরের ঢাকন

পুরুষদের জন্য: পুরুষদের নামাজের সময় নাভির নিচে থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা ফরজ।

নারীদের জন্য: নারীদের পুরো শরীর ঢাকা ফরজ। শুধুমাত্র মুখ, হাতের কব্জি এবং পায়ের টাখনু পর্যন্ত খোলা থাকতে পারবে।

৭.মাসিক ও নিপাশের সময় নামাজ

পুরুষদের জন্য: পুরুষদের নামাজের ক্ষেত্রে কোন প্রাকৃতিক বাধা নেই।

নারীদের জন্য: নারীরা মাসিক (হায়েজ) এবং সন্তান প্রসবের পর নিফাসের সময় নামাজ আদায় করতে পারে না। এ সময় নামাজ তাদের জন্য মাফ করা হয়েছে।

৮.জামাতের অবস্থান

পুরুষদের জন্য: পুরুষরা মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করতে উৎসাহিত হয়।

নারীদের জন্য: নারীদের জন্য মসজিদে যাওয়ার অনুমতি আছে, তবে বাড়িতে নামাজ আদায় করাকে বেশি পছন্দনীয় বলা হয়েছে।

৯.কাতারে দাঁড়ানোর নিয়ম

পুরুষদের জন্য: পুরুষরা জামাতে কাতারে একসঙ্গে দাঁড়ায়, একে অপরের সাথে কাঁধ মিলিয়ে।

নারীদের জন্য: নারীরা আলাদা কাতারে বা পর্দার পেছনে জামাতে দাঁড়ায়, তবে ঘরে একা নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে একা একা দাঁড়ায়।

এগুলোই প্রধান পার্থক্য, যা নারীদের শালীনতা এবং সম্মান বজায় রাখতে সাহায্য করে। ইসলামে নারী ও পুরুষের সঙ্গে নামাজের মৌলিক নিয়ম একই হলেও নারীদের জন্য শরীর এবং পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়


পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় দেওয়া হল:

ফজর: সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্য উদয় হওয়া পূর্বক্ষণ পর্যন্ত ফজরের নামাজের সময়। রাত শেষে পূর্ব আকাশে অন্ধকার ভেদ করে আড়াআড়ি ভাবে যে সাদা আলোরেখা ফুটে ওঠে তাই 'সুবহে সাদিক'। এর অর্থ প্রকৃত ভোট

জোহর: দুপুরের পর সূর্য যখন পশ্চিম দিকে হেলে যায় তখন থেকে লম্বা কোন কিছুর ছায়া (আসল ছায়া বাদ দিয়ে) দ্বিগুন না হওয়া পর্যন্ত জোহরের নামাজের সময় থাকে।

আসর: কোন বস্তুর আসল ছায়া দ্বিগুন ছড়িয়ে গেলে আসর নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সূর্য অস্তের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত থাকে। যে ব্যক্তি ওই দিনকার আসরের নামাজ পড়তে পারেনি, সে ব্যক্তি সূর্য অস্ত্রের সময়ও তা পড়ে নিতে পারে।

মাগরিব: সূর্য অস্ত যাওয়ার সম্পূর্ণ হওয়ার পর থেকে পশ্চিম আকাশে লালিমা বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের ওয়াক্ত।

এশা: মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এশার নামাজের ওয়াক্ত। ওই রাতে এশা কেউ পড়তে না পারলে সে রাত দ্বিপ্রহর থেকে সুবে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত পড়তে পারে। অবশ্যই মধ্য রাতের পর এশা পর মাকরুহ।

নামাজে ওযুর আবশ্যকতা


অযু ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা শারীরিক পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে নামাজ সহ বিভিন্ন ইবাদতের জন্য প্রয়োজন। এটি আল্লাহর নির্দেশে নির্ধারিত পদ্ধতিতে করতে হয়। ওযুর মাধ্যমে মানুষ শারীরিক ও আধ্যাত্মিকভাবে পবিত্রতা অর্জন করে আল্লাহর নৈকট্যে আসতে পারে।

নিয়ত করা: অযু শুরু করার আগে নিয়্ত করতে হয়, অর্থাৎ অন্তরে অযু করার ইচ্ছা স্থাপন করা। এটি মনে মনে করতে হবে। মুখে নিয়ত বলা জরুরি নয়।

বিসমিল্লাহ বলা: ওযু শুরু করার সময় প্রথমে "বিসমিল্লাহ" বা "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম" বলতে হয়। এটি ওযুর বরকত বাড়ায় এবং সঠিকভাবে ওযু করার জন্য মনে প্রশান্তি আনে।

হাত ধোয়া: প্রথমে দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ভালোভাবে ধুতে হবে। আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে পানি পৌঁছানোর জন্য আঙ্গুলগুলো ঘষে নিতে হবে।

কুলি করা: মুখের ভেতরে তিনবার পানি দিয়ে কুলি করতে হবে। মুখের প্রতিটি অংশে পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে।

নাক পরিষ্কার করা: নাকের মধ্যে পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর বাম হাত দিয়ে নাক ঝেড়ে পানি বের করে দিতে হবে। এ প্রক্রিয়া তিনবার করতে হবে।

মুখ ধোয়া: তিনবার মুখ সম্পূর্ণভাবে ধুতে হবে, কপাল থেকে শুরু করে থুতনি পর্যন্ত এবং এক্কান থেকে অন্য কান পর্যন্ত। মুখের প্রতিটি অংশে পানি পৌঁছাতে হবে।

হাত ধোঁয়া: প্রথমের ডান হাতের কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে। এরপর একইভাবে বাম হাতের কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে। কোনই সহ পুরো হাত ধুতে হবে এবং আঙ্গুলের থাকে ও পানি পৌঁছাতে হবে।

মাথা মাসাহ করা: ভেজা হাত দিয়ে মাথা এক চতুর অংশ বা পুরো মাথা একবার মাশাও করতে হবে। এটি সাধারণত সামনে থেকে পেছনে এবং তারপর আবার সামনে টেনে আনা হয়।

কানে মাসাহ করা: ভেজা হাতের আঙ্গুল দিয়ে কানের ভেতরে অংশ মাসাহ করতে হবে এবং বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে কানের বাইরের অংশ মাসাহ করতে হবে।

পা ধোয়া: প্রথমে ডান পা থাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে। এরপর একইভাবে বাম পা ধুতে হবে। পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ভালোভাবে পানি পৌঁছাতে হবে। আঙ্গুলের ফাঁকগুলো আঙ্গুল দিয়ে ঘষতে হবে।

ওযুর শেষের দোয়া

অজু শেষ হলে দোয়াটি পড়া সুন্নত: "আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু ওয়া আশাহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলূহু"। এর অর্থ: (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। তিনি এক এবং তার কোন শরিক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মোহাম্মদ (সা:) তাঁর বান্দা ও রাসূল)

নামাজ ভঙ্গের কারণ সমূহ

নামাজ ভঙ্গ হওয়ার বিভিন্ন কারণ আছে, যা ইসলামের বিধি অনুসারে নামাজকে বাতিল করে দেয়। এগুলো শারীরিক-মানসিক এবং আচরণগত কিছু বিষয় থেকে উদ্ভূত হতে পারে। নিচে নামাজ ভঙ্গ কারণ সমূহ গুলো নিচে দেওয়া হলো:
ওযু ভেঙ্গে যাওয়া
যদি কোন কারনে ওযু ভেঙ্গে যায়, তবে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। ওযু ভঙ্গের কারণ গুলো হলো:
  1. প্রসাব বা পায়খানা করা
  2. গ্যাস বা বায়ু নির্গমন হওয়া
  3. শরীর থেকে রক্ত, পুচ বা কোন ধরনের তরল নির্গত হওয়া
  4. বমি করা
  5. ঘুমিয়ে পড়া (যেমনভাবে ওযু ভেঙে যায়)
কথা বলা
নামাজের মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন কথা বললে নামাজ ভেঙ্গে যায়। এটি নামাজের সাথে সম্পর্কিত না হলে বিশেষভাবে নামাজ ভঙ্গ হয়।
উচ্চস্বরে হাসি
নামাজের মধ্যে উচ্চস্বরে হাসলে নামাজ ভেঙ্গে যায়। তবে মৃদু হাসলেন নামাজ ভাঙবে না, যদিও তার মাখরু হ (অপছন্দনীয়)।
খাওয়া বা পান করা
নামাজের মধ্যে কিছু খাওয়া বা পান করা নামাজকে ভঙ্গ করে দেয়। এমনকি সামান্য কিছু গিলে ফেললেও নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
নামাজের বাইরে কোন কাজ করা
নামাজের মধ্যে কোন অতিরিক্ত কাজ করলে, যেমন হাত দিয়ে কিছু ধরা, জামা বা শরীরের অংশ ঠিক করা, যদি বেশি নড়াচড়া হয় তবে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
কিবলা থেকে মুখ ঘুরানো
নামাজের সময় কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতে হয়। যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে নামাজের মধ্যে কিবলা থেকে শরীর বা মুখ ঘুরিয়ে ফেলা হয়, তবে নামাজ ভেঙ্গে যায়।
অজ্ঞান বা সংজ্ঞাহীন হওয়া
নামাজের মধ্যে যদি কেউ অজ্ঞান হয়ে যায় বা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় চলে যায়, তবে তার নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
শরীরে ঢাকন খুলে যাওয়া
নামাজের সময় যে অংশগুলো ঢাকতে হয় (পুরুষদের ক্ষেত্রে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং নারীদের ক্ষেত্রে পুরো শরীর, মুখ ও হাতছাড়া) তা উন্মুক্ত হলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
নামাজের ফরজ বা ওয়াজিব বাদ দেওয়া
নামাজের কোন ফরজ (যেমন, রুকু বা সেরদা) বা ওয়াজিব (যেমন, প্রথম বৈঠক) বাদ গেলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে তবে ওয়াজিব ভুলে বাদ গেলে সাহু সিজদা করা যায়।
 দৃষ্টি ঘোরানো বা অতিরিক্ত নড়াচড়া
নামাজে দৃষ্টি স্থির রাখা উচিত। ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যদিকে দৃষ্টি ঘোরালে বা অতিরিক্ত নড়াচড়া করলে নামাজ মাকরুহ হবে, আর বেশি হলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
শিরক বা কুফরি কথা বলা
নামাজে শিরক বা কুফরী ধরনের কথা বললে তা নামাজ বাতিল করবে এবং ব্যক্তির ঈমান ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
জানবাজি করা
নামাজের মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন রোকনকে উপেক্ষা করলে বা নিজেকে বিপদে ফেললে অযথা ঝুঁকি নেওয়া নামাজ ভঙ্গ করবে।

নামাজ ভঙ্গ হওয়ার এসব কারণ থেকে সতর্ক থেকে সঠিকভাবে নামাজ আদায় করতে হবে। নামাজে মনোযোগ, শালীনতা, শুদ্ধতা এবং নিয়মমাফিক পালন ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত যা আমাদেরকে শুদ্ধ রাখে।

নামাজের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত


আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, আমি জিন ও মানবজাতিকে শুধু আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি (সূরা জারিয়াত ৫৬ আয়াত)।

প্রায় সকল জাতির মধ্যে সৃষ্টিকর্তা এবাদত উপাসনা ধর্ম বিধানের অন্তর্গত। যে জাতির মধ্যে আধ্যাত্মিক চর্চার অভ্যাস সে জাতি প্রকৃতপক্ষে নির্বোধ। পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে। উতলু মা ঊহিয়া ইলাইকা মিনাল কিতাবি ওয়া আকিমিসসালাহ, ইন্নাস সালাতা তানহা অনিল ফাহশারয়ি ওয়াল মুনকার।

অর্থ: (হে মোহাম্মদ (সা:)তোমার ওপর যে, পবিত্র কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তা পড় এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা কর; নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতার ও দুষ্কর প্রতিরোধকারী (সূরা আনকাবূত আয়াত: ৪৫ )

এখানে কুরআন পাঠ করার পরই আল্লাহ তাআলা নামাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য আদেশ করেছেন। প্রতিদিন মনোযোগ সহকারে ওযুর সহিত পাঁচবার নামাজ পড়ার প্রতিটি বয়স্ক জ্ঞান সম্পন্ন মুসলমানের জন্য ফরজ। হাদিজ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, শিরক ও কুফরী ইত্যাদি কবিরা গুনাহ ছাড়া নামাজ মানুষের প্রাত্যহিক অন্যান্য গুনহা ক্ষমাকারী ও সংশোধক।

মোহাম্মদ (সা:)বলেন: যারা নিয়মিত আল্লাহর স্মরণে নামাজ পড়ে থাকেন তারা যে অশ্লীলতা ও অপকর্মে লিপ্ত হতে পারেন না তা ধ্রুব সত্য। এজন্য নামাজ ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ রোকন বা মঙ্গলময় ইবাদত বলে নির্দিষ্ট হয়েছে।

নামাজ বেহেস্তের চাবি ও সকল ইবাদতের মূল ভিত্তি। ঈমানদারদের জন্য নামাজ রাজ্য সমতুল্য। নামাজ ছাড়া অতীতেও কেউ অলি আল্লাহর মর্যাদা মর্যাদাবান হতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবেনা। হাশরে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। আল্লাহর সাথে মানুষের সংযোগ সাধনে নামাজের প্রধান লক্ষ্য।আল্লাহর ধ্যান ও সরণ এই নামাজের প্রাণ।

প্রাণহীন নামাজ কোন লাভ হয় না, বরং আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্টি উৎপাদন করে। কুরআন শরীফে আল্লাহতালা বলেছেন, আমার স্মরণের জন্য নামাজ প্রতিষ্ঠা কর (সূরা ত্বোয়াহা: আয়াত১৪)।

মাসিক ও নিপাশের সময় নামাজ 

মহিলাদের মাসিক ঋতু চাপকে হায়েস বলা হয়। এটা নয় বছর থেকে শুরু করে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত হতে পারে। এর সময়সীমা কমের সংখ্যা ৩ দিন এবং ঊর্ধ্বে ১০ দিন। তাই তিন দিনের কম বা ১০ দিনের বেশি হলে এস্তেহাযা বলে গণনা করতে হবে। এটা রোগের কারণে হয়।
 
হায়েজ অবস্থায় নামাজ পড়া যাবে না বরং ওই সময় নামাজ কাজা ও করতে হবে না, কিন্তু এস্তেহাযার সময়ে রক্তমতো অজু করে নামাজ পড়ে নিতে হবে। এ সময়ে স্বামী সহবাসও করা যাবে ‌ এ অবস্থায় রোজাও রাখতে পারবেন। কিন্তু হায়েজ অবস্থায় রোজা রাখা যাবে না বটে, কিন্তু পাক হওয়ার পরে রোজা কাযা করে নিতে হবে।

 লেখক এর শেষ কথা 

উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে মহিলাদের সুন্নত সম্মত উপায়ে নামাজ আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে। আপনি যদি আজকের এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তাহলে আপনি মহিলাদের সুন্নত সম্মত উপায়ে নামাজ আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এইরকম আরো তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ঘুরে আসতে পারেন।

 



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url