যেসব কারণে শরীর নাপাক হয়-বিবরণসহ দেওয়া হলো


প্রিয় পাঠক আপনি কি যেসব কারণে শরীর নাপাক হয় সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি একদম ঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকের আর্টিকেলটির যেসব কারণে শরীর নাপাক হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা করব।

বিভিন্ন কারণে শরীর নাপাক হতে পারে। চলুন তাহলে দেরি কেন জেনে নেওয়া যাক যেসব কারণে শরীর নাপাক হয়, বিবরণ সহ নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

পেজ সূচিপত্র: যেসব কারণে শরীর নাপাক হয় সে সম্পর্কে নিজে বিস্তারিত দেওয়া হলো:


যেসব কারণে শরীর নাপাক হয়


যেসব কারণে শরীর নাপাক হয়। নাপাকী বস্তুকে বলা হয় নাজাসাত। নাপাকী মূলত দুই প্রকার:

  1. না যার সাথে গলিজা মানে (ভারি নাপাকী)
  2. ও নাজাসাতে খলিফা (হালকা নাপাকী)

ভারী নাপাকী কি?


  • মানবদেহ থেকে যা বের হলে ওযু নষ্ট হয় বা গোসল ফরজ হয়, তা নাজসাত সাথে গলিজা যেমন:
  • পেশাব, পায়খানা, মনি, মজি পুজ, রক্ত, মুখ ভর্তি বমি, নবজাতক শিশু ও বালক- বালিকার পেশাব -পায়খানা।
  • হায়েজ নেফাস ও ইস্তেহাযর রক্ত।
  • মদ, প্রবাহিত রক্ত, মৃত জন্তু যে সকল জন্তুর গোস্ত হালাল নয় সেগুলার পেশাব পায়খানা, গোবর, কুকুরের মলমূত্র, হাঁস মুরগির পায়খানা, হিংস্র জানোয়ার বিড়াল ও ইঁদুরের পেশাব পায়খানা ইত্যাদি।

হাল্কা নাপাকী কি?


হালকা নাপাকি গুলো হলো:

  1. ঘোড়ার পেশাব, গরু, ছাগল, উট, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি হালকা পশুর পেশাব।
  2. কাক চিল বাঁধ সুকুন ইত্যাদি হারাম পাখির মল।

এগুলো হলো হাল্কা নাপাকী

নাপাকীর মাসায়েল সম্পর্কে বিস্তারিত


  1. ভারী নাপাকী এক দেহরামের চেয়ে বেশি লাগলে শরীর বা কাপড় নাপাক হয়ে যায়। হাতের তালু সোজা করে পানি নিলে যতটুকু পানি তালুতে থেকে যায়, তত টুকুকে এক দেহ রাম ধরা হয়। নাপাকি জমাট হলে দেহ রামের ওজন এবং তরল হলে দেহরামের আয়তন ধর্তব্য হবে।
  2. হালকা নাপাকী কাপড়ের চার ভাগের এক ভাগ বা তার অধিক জায়গা জুড়ে লাগলে কাপড় নাপাক হয়ে যায়। এ রূপে দেহের কোন আঙ্গুলের চার ভাগের একভাগ বা তার চেয়ে বেশি জায়গায় লাগলেও দেহ নাপাক হয়ে যায়।
  3. পানির গুণ তিনটি। যথা-রং গন্ধ ও স্বাদ। কোন কারনে এই তিনটি গুণ নষ্ট হলে সে পানির ব্যবহার নিষিদ্ধ। এরকম পানি গৃহপালিত পশুকে খাওয়ানো বৈধ নয়।
  4. বৃষ্টির সময় পথ চলতে যে পানি কাদা ছিটা লাগে তাতে দেহ বা কাপড় নাপাক হয় না। তবে কোন নাপা কী পরিষ্কার দেখা গেলে নাপাক হবে।
  5. যে সকল পাখির গোস্ত হালাল সেগুলোর মূল পাক। যেমন- কবুতর, চড়ুই ইত্যাদি।
  6. মশা, মাছি ও ছারপোকার রক্ত নাপাক নয়।
  7. নাপাকী থেকে যে বাষ্প বা ধোয়া ওঠে তা পাক। ফলের ভেতরে যে পোকা জন্মে তা নাপাক নয়, কিন্তু তা খাওয়া নাজায়েজ।
  8. ঘুমন্ত অবস্থায় মুখ থেকে যে লালা ঝরে তা নাপাক নয়।
  9. খাদ্যদ্রব্য নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধযুক্ত হলেও নাপাক হয় না।
  10. যে পানি দ্বারা নাপাক জিনিস ধোয়া হয় সে পানির নাপাক হয়ে যায়।
  11. যদি শরীরে, কাপড়ে বা দাড়ি চুলে নাপাক রং লাগে তবে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। যখন রংহীন সাদা পানি বের হবে তখনই তা পাক বলে গণনা হবে। যদিও রংয়ের চিহ্ন পুরোপুরি দূর হয় না।
  12. মুরগি বা হালাল কোন জীব জবাই করে কেটে সাফ করার আগে যদি গরম পানিতে সিদ্ধ করা হয় তবে তা নাপাক ও হারাম হয়ে যায়, পাক করার আর কোন উপায় থাকে না।
  13. পানিতে নাপাকী পড়লে সে পানি নাপাক হয়ে যায়। কিন্তু স্রোতের পানি হলে ওই নাপাকের কারণে পানির গুণ, রং, স্বাদ, গন্ধ নষ্ট না হলে পাক হবে না।
  14. কমপক্ষে ১০০ বর্গহাত আয়তন বিশিষ্ট কোন হাউজ বা পুকুরের গভীরতা যদি এতটুকু হয় যে, তা থেকে আজালা ভরে পানির তুললে নিচের মাটি দেখা যায় না, তাহলে সে হাউস বা পুকুরের পানি স্রোতের পানি বলে গণ্য হবে।
  15. মশা, মাছি, ভিমরুল ইত্যাদি পানিতে পড়ে মরে থাকলে বা বাইরে মোরে পানিতে এসে পড়লে পানি নাপাক হবে না।
  16. পানিতে যে সকল প্রাণী জন্মে তা পানিতে মরে থাকলে পানি নাপাক হয় না। ব্যাঙ বা কচ্ছপ মরে পচে গলে পানির সাথে মিশে গেলেও পানি নাপাক হয় না। এ পানি দ্বারা ওযু- গোসল করা যাবে বটে, কিন্তু পান করা দুরস্ত হবে না।
  17. শূকরের চামড়া কোন অবস্থাতেই পাপ নয়।

ঝুটার(এঁটো খাবার) মাসায়েলের সম্পর্কে বিস্তারিত



  • মুসলমান অমুসলমান পাক নাপাক বালক বালিকা সকলে ঝুটা(এঁটো খাবার) পাক। তাদের ঘামও পাক।
  • জন্তু পাক হলে সে জন্তুর ঝুটা ও ঘাম পাক। নাপাক হলে ঝুটা(এঠো খাবার) এবং ঘামও নাপাক।
  • কুকুরের ঝুটা (এঁটো খাবার) নাপাক। কোন পাত্রে বা কোন স্থানে মুখ দিলে তা কমপক্ষে তিনবার না ধুলে পাক হয় না।
  • শুকর, বাঘ, শেয়াল, চিতাবাঘ, বানর ইত্যাদি হিংস জন্তুর ঝুঠা (এঁটো খাবার) নাপাক।
  • বিড়ালের ঝুটা (এঁটো খাবার)পাক তবে মাকরূহ।
  • বেঁধে রাখা মুরগির ঝুটা পাক। কিন্তু ছাড়া অবস্থায় এটা ওটা খেয়ে বেড়ায় এমন মুরগির ঝুটা মাকরুহ।
  • যে সকল পশু পাখির গোস্ত হালাল সেগুলোর ঝুটা পাক। ঘোড়ার ঝুটাও পাক।
  • সাপ, বিছা, ইদুর, টিকটিকি ইত্যাদির ঝুটা মাকরুহ।
  • ইদুর বা তেলাপোকা রুটির কিছু অংশ খেয়ে ফেললে সে দিক থেকে ছিড়ে ফেলে দিয়ে অবশিষ্ট অংশ খাওয়া যায়।
  • স্বামী ছাড়া অন্য কারো ঝুটা খাওয়া মহিলাদের জন্য মাকরুহ । একইভাবে স্ত্রী ছাড়া অন্য কারোর ঝুটা খাওয়া অবৈধ।
  • বিছানার এক অংশ নাপাক থাকলে অন্য অংশ ওপর নামাজ পড়া বৈধ।
  • শুধু সন্দেহের কারণে পাক জিনিস নাপাক বলে গণ্য হয় না।

নাপাকী দূর করার নিয়ম


  1. যে তরল নাপাকী শুকিয়ে গেলে দেখা যায় না,তা শরীরে লাগলে তিনবার ধুয়ে নিতে হয়। কাপড়ে লাগলেও তিনবার ধুয়ে নিতে হবে, তবে প্রতিবারই ভালো করে নিংড়াতে হবে।
  2. তরল নাপাকি যদি এমন জিনিসে লাগে যা নিংড়ানো যায় না, তাহলে সেটাও তিনবার ধুয়ে নিতে হবে, তবে প্রতিবার ধুয়ে এতে সময় পরিমাণ ঝুলিয়ে রাখতে হবে যাতে পানি সম্পূর্ণরূপে ঝরে পড়ে যায়।
  3. নাপাকী নিশানো তরল বস্তুর দাগ ওঠানোর কষ্টকর হলে তিনবার ধুয়ে নিলেই পাক হয়ে যাবে, যদিও দাগ না উঠে।
  4. জুতা, স্যান্ডেলে গোবর- বিষ্ঠা ইত্যাদির ন্যায় জমাট নাপাকী লাগলে জমীনে ঘষে নাপাকী তুলে ফেলতে হবে। আর নাপাকী তরল হলে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
  5. কাপড়, শরীর বা অন্য কোন জিনিসের শুকনা বা তরল মনে লাগলে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
  6. মাটি ও ইটের বিছানায় তরল কোন নাপাকি পড়ে শুকিয়ে নাপাকের চিহ্ন যদি দূর হয়ে যায়, তবে তার ওপর নামাজ পড়া বৈধ হবে। তবে ঐরূপ মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করা যাবে না। ঘরে কাঁচা মেঝে পেশাব লেগে নাপাক হয়ে গেলে তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে নাপাক পাক করে দিতে হবে। আর পাক হলে পানি ঢেলে দিয়ে হাত দিয়ে ঘষার পর পাক কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। এরূপ তিনবার করতে হবে।
  7. আয়না, লোহা নির্মিত বস্তু বা এমন জিনিস যা নাপাকী চুষ নিতে পারে না, তা পাক কাপড় দিয়ে মুছে ফেললে পাক হয়ে যায়।
  8. শরীরে মণি লাগলে ধুয়ে ফেলা ব্যতীত শরীর পাক হয় না

পবিত্রতা রক্ষার জন্য পাঁচটি জরুরী কাজ


  • পুরুষের খাতনা করা: এটা ইসলামের বিশেষ বিধান। বয়স্ক হওয়ার পূর্বে আপনার কাজ সম্পন্ন করা উত্তম। নইলে পবিত্রতা হাসিল করা বিশেষ কঠিন হয়ে পড়ে।
  • নাভির নিচে ও বগলের লোম পরিষ্কার করা: নাভির নিচের লোম বড় হওয়ার পূর্বেই কামিয়ে ফেলা সুন্নত। আর বগলের লোম উপরে ফেলা সুন্নত। বড়জোর ৪০ দিনের পূর্বেই এই কাজ করা উত্তম। এর বেশি বিলম্ব করা হারাম। এমনকি নামাজও হবে না।
  • হাত- পায়ের নখ কাটা: গোস্তের সাথে মিলিত অংশ বাদ দিয়ে নখের বাড়তি অংশ কেটে রাখতে হবে। নখ সপ্তাহে একবার কাটা উত্তম। নখ কাটার সুন্নত সম্মত নিয়ম হল, প্রথমে ডান হাতের, তারপর বাম হাতের নখ কাটতে হবে এবং ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল (তর্জনী) থেকে কাটা শুরু করে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে এসে শেষ করতে হবে। তারপর প্রথমে ডান পায়ের, তারপর বাম পায়ের নখ কাটতে হবে। পায়ের নখ কাটতে ডান পায়ের কনিষ্ঠা আঙ্গুল থেকে শুরু করতে হবে।
  • গোঁপ ছোট করে ছেটে রাখা সুন্নত। খুর অথবা ব্লেড দিয়ে কামিয়েও ফেলা যায়, তবে এরূপ করা মাকরুহ; বরং সেটে একেবারে ছোট করে রাখতে হবে। এটা সপ্তাহে একবার করা উচিত। নেককার লোকেরা সাধারণত প্রতি শুক্রবারে এটা করে থাকেন।
  • প্রতিটি মুসলমানের জন্য দাড়ি রাখা ওয়াজিব। লম্বা বেশি হলে এক মুষ্টি পরিমাণ রেখে বাড়তি অংশ ছেঁটে ফেলা যায়।

কূপ  সম্পর্কে জ্ঞাতব্য


ছোট কুঁপে (১০০ বর্গ হাতের চেয়ে ছোট) কোন নাপাক জিনিস পতিত হলে তা নাপাক হয়ে যায়। ওই নাপাক জিনিস কম হোক বেশি হোক তাতে কিছু আসে যায় না। এরকম কুপের সব পানি বের করে ফেলা ব্যতীত পাক হবে না।
কূপের ভেতরের চতুর্দিকের দেওয়াল ধোয়া লাগে না। যে বালতি বা দড়ি দ্বারা পানি বের করা হয় তাও ধোয়ার দরকার হয় না। সব পানি বের করার অর্থ পানি এত পরিমাণ বের করবে যাতে বালতির অর্ধেক ও যেন না ডুবে। ছোট কূপর ক্ষেত্রে নিম্নের বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে:

  1. কবুতর বা চড়ুই পাখির মল কুপে পড়লে পানি নাপাক হবে না।
  2. হাঁস মুরগির মাল কুপে পতিত হলে নাপাক হবে। তখন সব পানি বের করে ফেলতে হবে।
  3. গরু, ছাগল, কুকুর, বিড়াল পেশাব করলে বা অন্য কোন নাপাকী পড়লে পানি বের করে ফেলতে হবে।
  4. মানুষ, কুকুর, গরু, ছাগল ইত্যাদি কুপে পড়ে মরে গেলে বা বাইরে মোরে ভেতরে পড়লে সব পানি বের করতে হবে।
  5. ইদুর বা চড়ুই পাখির মত ছোট জন্তু যদি কুপে পড়ে মরে গলে পঁচে যায়, তা হলেও সব পানি বের করে ফেলতে হবে।
  6. উক্ত প্রকার জন্তু যদি শুধু মরে যায় তাহলে (ফোলা-ফাটা বা পচার পূর্বে) প্রথমেই সেটি বের করে ফেলতে হবে। তারপর ২০ বালতি পানি বের করা ওয়াজিব। মৃতদেব বের করার আগে হাজার বালতি পানি বের করলেও তা হিসাবে ধরা হবে না।
  7. কবুতর, মুরগি, বিড়াল ইত্যাদি ধরনের প্রাণী কুপে পড়ে মারা গেলে (ফোলা-ফাটা বা পচার আগে) ৪০ বালতি পানি বের করে ফেলতে হবে।
  8. সাধারণত যে বালতিতে পূর্বে ব্যবহার করা হয়, সে বালতি দিয়েই হিসেব করতে হবে। তবে অনেক বড় বালতি ব্যবহার করে থাকলে সচরাচর সে আকারের বালতি সবাই ব্যবহার করে, সে বালটি হিসেব করতে হবে।
  9. কুপের নিচে বা পাশে থেকে অবিরাম পানি আসতে থাকলে অনুমান করে যে পানি প্রথমে ছিল সেই পরিমাণ পানি বের করে ফেললেই চলবে।
  10. নাপাকী দেখার সময় থেকেই পানি পাক বলে ধরতে হবে। পূর্বে অজু, গোসল করা বা কাপড়, চোপড় ধোয়া হয়ে থাকলে তা দুরস্ত বলে ধরে নিতে হবে।
  11. ইঁদুর, বিড়াল ইত্যাদি কূপের মধ্যে পড়ে জীবিত অবস্থায় বের হয়ে এলে পানি বের করা দরকার হবে না। তবে সেগুলোর গায়ে রক্ত বা অন্য কোন নাপাকী থাকলে অবশ্যই পানি বের করে ফেলতে হবে।
  12. কূপ থেকে যে পরিমাণ পানি বের করতে হবে তা একেবারেও বের করা যায় আবার অল্প অল্প করে কয়েকবারেও বের করা যায়।

লেখক এর শেষ কথা


প্রিয় পাঠক আপনি যদি আজকে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তাহলে যে কারণে শরীর নাপাক হয়, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এরকম আরো নিত্য নতুন তথ্য পেতে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url