ইসলামে নারীদের পায়ের নুপুর পড়া কি জায়েজ!
ইসলামে নারীদের পায়ের নুপুর পড়া কি জায়েজ সে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে। ইসলাম একটি সম্পূর্ণ জীবনব্যবস্থা যা মানুষের জীবনের প্রতিটি দিককে সুনির্দিষ্ট
নীতি ও বিধানের মাধ্যমে পরিচালনা করে। পোশাক-পরিচ্ছদ, অলঙ্কার, এবং এর সঙ্গে
সম্পর্কিত আচরণের ব্যাপারে ইসলাম স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে।
মেয়েদের পায়ের নুপুর পরার বিষয়টিও এর আওতায় পড়ে। এই প্রসঙ্গে ইসলামের দৃষ্টিকোণ
ব্যাখ্যা করতে হলে কুরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা করা জরুরি। নিচে বিষয়টি
বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা হলো।
পেজ সূচিপত্র: নিচে যে অংশ দেখতে চান সেখানে ক্লিক করুন
- ইসলামের মূলনীতিতে অলংকার ও পায়ের নুপুর
- নুপুরের আওয়াজ ও নারীদের আচরণ
- হাদিসে নুপুর পড়ার নির্দেশনা
- ইসলামে সৌন্দর্যের সীমাবদ্ধতা
- অলংকার পড়া ও শালীনতা ধারণা
- ইসলামে আলোকে নুপুর পড়া গ্রহণযোগ্যতা
- স্বামী বা ঘরের পরিবেশে নূপুর করা
- ফিকহের দৃষ্টিকোণ থেকে
- ইসলামী সংস্কৃতি ও আধুনিক চর্চা
- সংস্কৃতি প্রভাব
- উপসংহার
ইসলামের মূলনীতিতে অলঙ্কার ও পায়ের নুপুর
ইসলামে নারীদের অলঙ্কার পরার অনুমতি আছে, তবে তা সীমাবদ্ধ কিছু নীতিমালার অধীনে।
পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতে নারীদের তাদের অলঙ্কার প্রদর্শন না করার নির্দেশ দেওয়া
হয়েছে, যা মূলত পুরুষদের সামনে অলঙ্কার বা সজ্জা প্রদর্শনের বিপরীতে।
এই আয়াতের ভিত্তিতে, ইসলাম নারীদের প্রতি এমন নির্দেশ দিয়েছে যে তারা তাদের
অলঙ্কার সাধারণভাবে প্রদর্শন করবে না। তাই পায়ের নুপুর পড়া যদি এমন হয় যা
পুরুষদের আকর্ষণ করে বা দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তাহলে তা পরা ইসলামি শিষ্টাচারের
সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইসলাম এমন কোনো পোশাক বা অলঙ্কারের অনুমোদন দেয় না, যা
প্ররোচনামূলক অথবা পুরুষদের প্রতি আকর্ষণ তৈরি করতে পারে।
নুপুরের আওয়াজ ও নারীদের আচরণ
ইসলামে নুপুর পরার বিষয়ে সবচেয়ে আলোচিত অংশ হলো এর আওয়াজ। যখন কোনো নারী নুপুর
পরে হাঁটে, তখন নুপুরের আওয়াজ পুরুষদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইসলামী বিদ্বানরা বলেন, নারীদের পায়ের আওয়াজ যেন পুরুষদের
মনোযোগ আকর্ষণ না করে। বিশেষ করে এমন জিনিস পরিহার করতে হবে, যা তাদের সৌন্দর্য
বা গোপন সাজসজ্জার অংশ প্রকাশ করে। নুপুরের আওয়াজ পায়ের সাজসজ্জার এক ধরনের
প্রকাশ, যা ইসলামে নিষিদ্ধ। এটি নারীর সাধারণ শালীনতা রক্ষা করার নীতির পরিপন্থী।
হাদিসে নুপুর পরার নির্দেশনা
হাদিসেও পায়ের নুপুর পরার ব্যাপারে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সহিহ হাদিসে পাওয়া যায়,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলিম নারীদের প্রতি কিছু
নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে তাদের আচরণ শালীন ও সংযমী হয়।
এই হাদিসটি মূলত নারীদের বিশেষ কিছু আচরণের প্রতি ইঙ্গিত করে, যাতে তারা সমাজে
ফেতনা বা প্ররোচনা তৈরি না করে। পায়ের নুপুরের আওয়াজও এমনই এক ধরনের বিষয়, যা
সমাজে অযথা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।
ইসলামে সৌন্দর্যের সীমাবদ্ধতা
ইসলামে নারীর সৌন্দর্য ও অলঙ্কারের ব্যবহার শুধুমাত্র বৈধ এবং নিকটাত্মীয়দের
মধ্যে সীমাবদ্ধ। ইসলামের মতে, নারী-পুরুষের মধ্যে শালীনতা বজায় রাখা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। নারীরা তাদের অলঙ্কার স্বামী, পিতা, ভাই, পুত্র ও নির্দিষ্ট মর্মে
অনুমোদিত ব্যক্তিদের সামনে প্রদর্শন করতে পারেন। কিন্তু, অচেনা পুরুষদের সামনে
এটি প্রকাশ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
অলঙ্কার পরা ও শালীনতার ধারণা
ইসলামে শালীনতা শুধু পোশাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি অলঙ্কার ও সাজসজ্জার
ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যদি কোনো অলঙ্কার বা সাজসজ্জা নারীর শালীনতা ক্ষুণ্ন করে বা
অন্যদের মধ্যে প্ররোচনা তৈরি করে, তবে তা পরিহার করা উচিত। নুপুরের ক্ষেত্রে, এর
আওয়াজ পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং ইসলামের শালীনতার নীতি অনুসারে এটি অসঙ্গত।
ইসলামের আলোকে নুপুর পরার গ্রহণযোগ্যত
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে, যদি কোনো নারী নুপুর পড়ে এবং তা শোনা যায়, বিশেষ করে এমন পরিবেশে যেখানে অপরিচিত পুরুষেরা আছে, তবে তা পরিহার করা উচিত। নুপুর পরা ইসলামে নিষিদ্ধ নয়, তবে এর ব্যবহার করা উচিত এমনভাবে যাতে তা কারও দৃষ্টি আকর্ষণ না করে বা শালীনতার সীমা লঙ্ঘন না করে।
স্বামী বা ঘরের পরিবেশে নুপুর পড়া
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, স্বামী বা ঘরের পরিবেশে নুপুর পরা সম্পূর্ণভাবে
বৈধ। নারীরা তাদের স্বামীর কাছে সাজসজ্জা করতে পারেন এবং অলঙ্কার ব্যবহার করতে
পারেন, কারণ এটি ইসলামের যৌনতা ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুশৃঙ্খল ধারার মধ্যে পড়ে।
কিন্তু বাইরের পরিবেশে বা জনসমক্ষে এর ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত, যাতে তা
কোনো প্রকার ফেতনার কারণ না হয়।
ফিকহের দৃষ্টিকোণ থেকে
ইসলামের চারটি প্রধান মাজহাব (হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি, হাম্বলি) এরও নিজস্ব
দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এই বিষয়ে। ফিকহের দৃষ্টিকোণ থেকে, যেকোনো কিছু যা মানুষের
দৃষ্টি আকর্ষণ করে বা গুনাহের দিকে ধাবিত করে, তা পরিহার করা উচিত। নুপুরের আওয়াজ
যদি সমাজে কোনো ধরনের অশালীনতার জন্ম দেয়, তবে তা পড়া ইসলামি নীতির পরিপন্থী।
হানাফি মাজহাব
হানাফি মাজহাবে, পায়ের নুপুর পরা যদি তা ফেতনার কারণ না হয়, তবে তা বৈধ বলে
বিবেচিত হতে পারে। তবে সাধারণত, এটি জনসমক্ষে পরা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া
হয়। কারণ, নুপুরের আওয়াজ পুরুষদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে।
মালিকি মাজহাব
মালিকি মাজহাবে, নারীদের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে যে তারা যেন শালীনতা বজায় রাখে
এবং এমন কোনো আচরণ না করে, যা পুরুষদের প্রতি আকর্ষণ তৈরি করে। এই মাজহাবেও
জনসমক্ষে নুপুর পরা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ইসলামি সংস্কৃতি ও আধুনিক চর্চা
আধুনিক যুগে, অনেক নারী অলঙ্কার এবং নুপুর পরেন বিভিন্ন উদ্দেশ্যে, যেমন
সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অথবা শুধুমাত্র সাজসজ্জার অংশ হিসেবে। তবে ইসলামের শালীনতার
নীতিগুলো সবসময় সমানভাবে প্রযোজ্য থাকে। মুসলিম নারীরা যদি নুপুর পরেন, তবে তাদের
এটি মনে রাখতে হবে যে, তাদের উদ্দেশ্য যেন শালীনতা রক্ষা করা এবং প্ররোচনা তৈরি
না করা।
সাংস্কৃতিক প্রভাব
অনেক সমাজে নুপুর পরা একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। কিন্তু ইসলাম সাংস্কৃতিক
চর্চাকে শালীনতার মাপকাঠিতে বিবেচনা করে। যদি কোনো সাংস্কৃতিক আচরণ ইসলামের
মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য। তবে যদি তা শালীনতার নীতির
বিপরীতে যায়, তাহলে তা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে সমর্থনযোগ্য নয়।
উপসংহার
ইসলামে নারীদের পায়ের নুপুর পরার বিষয়টি তাদের শালীনতা এবং আচরণের সঙ্গে
ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। কুরআন ও হাদিসের আলোকে, নারীদের এমন কোনো অলঙ্কার ব্যবহার করতে
নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, যা পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। বিশেষ করে, পায়ের
নুপুরের আওয়াজ প্ররোচনার কারণ হতে পারে বলে জনসমক্ষে এটি পরা থেকে বিরত থাকার
পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে, ঘরের পরিবেশে বা স্বামীর সামনে এর ব্যবহার বৈধ এবং
প্রশংসনীয়।
অতএব, ইসলামে নুপুর পরা নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু এর ব্যবহার করা উচিত সঠিক নীতির
আলোকে, যাতে এটি শালীনতার সীমা লঙ্ঘন না করে এবং সমাজে কোনো ধরনের প্ররোচনার কারণ
না হয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url