পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া-১০টি উপায়


আপনি কি পিরিয়ডের ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন? আজকের আর্টিকেলে পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া ১০টি উপায় এর কথা আপনাদেরকে জানাবো। পিরিয়ডের ব্যথা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি এর সমাধান পেয়ে যাবেন। 
            
পিরিয়ডের ব্যথা এমন এক ধরনের সমস্যা যা প্রায় প্রত্যেক মেয়েদের জীবনে কখনো না কখনো এসে থাকে। বেশিরভাগ মেয়েদের ক্ষেত্রে, পিরিয়ডের ব্যথা কিছু সময়ের জন্য খুবই কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে। তবে এ ব্যথা কমানোর জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যা প্রাকৃতিক এবং সহজে অনুসরণ করা যেতে পারে। আসুন আমরা বিস্তারিতভাবে এই ঘরোয়া উপায় গুলোর সম্পর্কে জানেনি।

পেজ সূচিপত্র: আপনি  যেই অংশটি দেখতে চাচ্ছেন তার উপরে ক্লিক করুন

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া ১০টি উপায়

১. গরম পানির সেঁক

গরম পানির সেঁক পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়। গরম পানির সেঁক নেয়া হলে শরীরের পেশিগুলো শিথিল হয়ে যায় এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। এতে ব্যথা হ্রাস পেতে শুরু করে। সেঁকের জন্য হট ওয়াটার ব্যাগ বা হিটিং প্যাড ব্যবহার করা যেতে পারে। ১৫-২০ মিনিট ধরে সেঁক নিলে উপশম পাওয়া যেতে পারে।

২. আদা চা

আদা প্রদাহবিরোধী গুণাবলী সমৃদ্ধ যা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আদা চা তৈরি করে দিনে দুই থেকে তিনবার পান করলে পিরিয়ডের ব্যথা কমতে শুরু করে। আদা চা তৈরি করতে প্রায় ১-২ টুকরা তাজা আদা পানিতে ফোটাতে হবে এবং ৫-৭ মিনিটের জন্য ফোটানোর পর মধু মিশিয়ে তা পান করা যেতে পারে।

৩. ফেনেল বীজ

ফেনেল বীজের প্রদাহবিরোধী এবং অ্যান্টি-স্পাজমডিক গুণাগুণ রয়েছে যা জরায়ুর পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে। ফলে পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমানো সম্ভব। এক কাপ গরম পানিতে এক চা চামচ ফেনেল বীজ দিয়ে ৫ মিনিট ফোটানো হয়। তারপর ছেঁকে নিয়ে দিনে ২ বার এটি পান করলে উপশম পাওয়া যাবে।

৪. মধু এবং দারুচিনি চা

মধু এবং দারুচিনির মিশ্রণ প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। দারুচিনি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান সমৃদ্ধ মসলা যা পিরিয়ডের ব্যথা উপশমে কার্যকর। এক কাপ গরম পানিতে আধা চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো দিয়ে ৫-৭ মিনিট ফোটাতে হবে। এরপর মধু মিশিয়ে চা পান করতে পারেন।

৫. ক্যামোমাইল চা

ক্যামোমাইলের প্রাকৃতিক স্নায়ু শিথিলকারী গুণ রয়েছে যা পিরিয়ডের সময় পেশি শিথিল করতে এবং মন শান্ত রাখতে সাহায্য করে। এটি প্রদাহ কমিয়ে ব্যথা প্রশমনে সাহায্য করে। ক্যামোমাইল চা দিনে ২-৩ বার পান করলে পিরিয়ডের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ক্যামোমাইল পাতা ফুটন্ত পানিতে ৫ মিনিট ফোটাতে হবে, এরপর তা ছেঁকে পান করতে হবে।

৬. ব্যায়াম

পিরিয়ডের সময় হালকা ব্যায়াম করা শরীরে এন্ডরফিন নামক হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়। এন্ডরফিন হলো একটি প্রাকৃতিক ব্যথা উপশমকারী যা শরীরের যেকোনো ধরনের ব্যথা হ্রাস করতে কার্যকর। হালকা যোগব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

কিছু সহজ ব্যায়াম:

  • বাটারফ্লাই পোজ: মেঝেতে বসে দুই পায়ের তালু একসাথে জোড়া লাগিয়ে, হাঁটু দুটো দুই দিকে ছড়িয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে হবে।
  • বালাসনা (চাইল্ড পোজ): হাঁটু ভাঁজ করে বসুন, তারপর ধীরে ধীরে সামনের দিকে ঝুঁকে হাত দুটি সামনে প্রসারিত করে রাখুন। এতে কোমর ও পেটের পেশি শিথিল হয়।

৭. সুষম খাদ্যগ্রহণ

পিরিয়ডের সময় শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং সুষম খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে শরীরকে শক্তিশালী রাখা উচিত। বিশেষ করে ফলমূল, শাকসবজি এবং উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে ব্যথা কমে। মাংসপেশি শক্তিশালী থাকে এবং পিরিয়ডের সময় হওয়া দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। বিশেষ করে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার ব্যথা কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
৮. তিলের তেল ম্যাসাজ

তিলের তেলে ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক রয়েছে যা পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে এবং পিরিয়ডের ব্যথা কমায়। তিলের তেল হালকা গরম করে পেটের নিম্নাংশে ম্যাসাজ করলে তা জরায়ুর পেশিগুলোকে শিথিল করতে সাহায্য করে এবং রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে ব্যথা উপশমে সহায়ক হয়।
৯. পুদিনা পাতা

পুদিনা পাতা একটি প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসাবে কাজ করে। পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরি চা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে কার্যকর হতে পারে। পুদিনা পাতার চা তৈরি করতে এক কাপ গরম পানিতে কয়েকটি পুদিনা পাতা ফোটাতে হবে। এরপর ছেঁকে নিয়ে দিনে ২-৩ বার পান করতে হবে।
১০. তিলের বীজ

তিলের বীজের ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ গুণাবলী রয়েছে যা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সহায়ক। প্রতিদিন কিছু তিলের বীজ চিবিয়ে খেলে বা তিলের বীজ মিশিয়ে রুটি, পরোটা ইত্যাদির সাথে খেলে পিরিয়ডের ব্যথা হ্রাস পেতে পারে।
১১. নিয়মিত মেডিটেশন

মেডিটেশন বা ধ্যানের মাধ্যমে মনকে শান্ত রাখা সম্ভব, যা পিরিয়ডের সময়ের মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা কমিয়ে দেয়। নিয়মিত মেডিটেশন করলে শরীরের আভ্যন্তরীণ ভারসাম্য রক্ষা হয়, যা পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
১২. পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম

পিরিয়ডের সময় পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের পুরোপুরি বিশ্রাম না পেলে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। ঘুম শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং ব্যথা কমাতে সহায়ক হয়। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত, এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্রাম নেওয়া উচিত।১৩. পানীয় ও জল গ্রহণ

পিরিয়ডের সময় পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। পানি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। পিরিয়ডের সময় পর্যাপ্ত পানি পান করলে জরায়ুর পেশি শিথিল হয় এবং ক্র্যাম্প কমতে শুরু করে। এছাড়া তরলজাতীয় পানীয় যেমন ডাবের পানি, ফলের রস ইত্যাদি পান করা যেতে পারে।

১৪. এপসম সল্ট স্নান

এপসম সল্ট একটি প্রাকৃতিক ম্যাগনেসিয়াম উৎস যা পেশি শিথিল করে এবং ব্যথা প্রশমনে সাহায্য করে। এক গামলা গরম পানিতে দুই কাপ এপসম সল্ট মিশিয়ে ২০-৩০ মিনিট স্নান করলে পিরিয়ডের সময় ব্যথা অনেকাংশে কমে যায়।

১৫. তাজা ফল ও শাকসবজি

তাজা ফল ও শাকসবজিতে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল শরীরকে শক্তিশালী করে এবং পিরিয়ডের সময় পুষ্টি সরবরাহ করে। বিশেষ করে কলা, ব্রকলি, পেয়ারা ইত্যাদি খাওয়া পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। কলার পটাশিয়াম পেশি শিথিল করে, আর ব্রকলির ফাইবার ও আয়রন পিরিয়ডের সময় শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে।

১৬. সুগন্ধযুক্ত তেল

সুগন্ধযুক্ত তেল যেমন ল্যাভেন্ডার বা রোজমেরি তেল ব্যথা কমাতে সহায়ক। এগুলো অ্যান্টি-ইনফ্ল

কি খেলে পিরিয়ডের ব্যথা কমবে 

পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে কিছু বিশেষ ধরনের খাবার উপকারী হতে পারে। এ ধরনের খাবারগুলি শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, পেশি শিথিল করে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে যা ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখে। নিচে কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যা পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে:

১. ফল এবং শাকসবজি

ফল এবং শাকসবজিতে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং পিরিয়ডের সময় ব্যথা উপশম করে।

  • ফল: আপেল, কলা, পেয়ারা, বেরি, এবং আঙুর
  • শাকসবজি: ব্রকলি, পালং শাক, কুমড়ো, গাজর

বিশেষত ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা পেশি শিথিল করতে সহায়ক।

আরো পড়ুনঃ  সিম্পল মেহেদি ডিজাইন ২০২৫

২. ফ্যাটি ফিশ (Omega-3 ফ্যাটি অ্যাসিড)

ফ্যাটি ফিশ যেমন স্যামন, সার্ডিন, এবং ম্যাকারেল ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা প্রদাহবিরোধী উপাদান হিসেবে কাজ করে। ওমেগা-৩ শরীরে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা জরায়ুর সংকোচন ও ব্যথা সৃষ্টি করে।

৩. বাদাম এবং বীজ

বাদাম এবং বীজে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা পেশি শিথিল করতে এবং ব্যথা কমাতে সহায়ক।

  • বাদাম: আখরোট, কাজু, আমন্ড
  • বীজ: তিল, চিয়া বীজ, সূর্যমুখী বীজ

৪. ডার্ক চকলেট

ডার্ক চকলেট ৭০% বা তার বেশি কোকোযুক্ত হলে এটি ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা পিরিয়ডের সময় মানসিক চাপ কমায় এবং ব্যথা উপশমে সহায়ক হয়।

৫. আদা এবং হলুদ

আদা এবং হলুদ উভয়ই প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক উপাদান, যা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে কার্যকর। আদার চা বা হলুদের দুধ খেলে ব্যথা কমে এবং শরীরের পেশি শিথিল হয়।

৬. তিলের বীজ

তিলের বীজে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম এবং জিঙ্ক থাকে, যা পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে সহায়ক। এটি পেশির সংকোচন কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরকে শক্তিশালী রাখে।

৭. পানি ও হাইড্রেটিং পানীয়

পানি এবং হাইড্রেটিং পানীয় যেমন ডাবের পানি, ফলের রস, বা হারবাল চা (যেমন ক্যামোমাইল চা) পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি শরীরের টক্সিন দূর করে, হজমশক্তি বাড়ায়, এবং পেশি শিথিল করে।

৮. দই এবং অন্যান্য ফারমেন্টেড খাবার

দইয়ের মতো ফারমেন্টেড খাবার প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, যা হজম শক্তি বাড়ায় এবং প্রদাহ কমায়। এটি শরীরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য রক্ষা করে, যা পিরিয়ডের সময় উদ্ভূত গ্যাস্ট্রিক বা অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

৯. পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার

পটাশিয়াম পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে এবং জরায়ুর সংকোচন কমিয়ে দেয়। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন কলা, অ্যাভোকাডো, মিষ্টি আলু, এবং নারকেল পানি পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে উপকারী।

১০. চা (হারবাল চা)

ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত, তবে ক্যামোমাইল চা, পুদিনা চা, আদা চা বা অন্যান্য হারবাল চা পিরিয়ডের ব্যথা উপশম করতে অত্যন্ত কার্যকর। এগুলো প্রাকৃতিক স্নায়ু শিথিলকারী হিসেবে কাজ করে।

এড়িয়ে চলার খাবার:

  1. ক্যাফেইন: ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (কফি, চা) শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে এবং পিরিয়ডের ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
  2. প্রক্রিয়াজাত খাবার: উচ্চমাত্রার লবণ ও চিনি সমৃদ্ধ প্রক্রিয়াজাত খাবার শরীরের প্রদাহ বাড়িয়ে দেয় এবং ব্যথা বাড়াতে পারে।
  3. অ্যালকোহল: এটি শরীরের পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে এবং পিরিয়ডের সময় ব্যথা বাড়ায়।

এই খাবারগুলো আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে পিরিয়ডের সময়ের ব্যথা অনেকটাই কমে আসতে পারে।

পিরিয়ডের ব্যথা বেশি কেন হয়

       

পিরিয়ডের ব্যথা (মেনস্ট্রুয়াল ক্র্যাম্পস) মূলত জরায়ুর সংকোচনের কারণে হয়। এই সংকোচনের সময় জরায়ুর পেশি কুঁচকে যায় এবং রক্ত প্রবাহ কমে যায়, যা ব্যথার কারণ। তবে কিছু বিশেষ কারণ রয়েছে যেগুলোর জন্য পিরিয়ডের ব্যথা বেশি হতে পারে:

১. প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের উচ্চ মাত্রা

প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন একটি প্রাকৃতিক হরমোন যা জরায়ু সংকোচনের নিয়ন্ত্রণ করে। যদি প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের মাত্রা বেশি হয়, তাহলে জরায়ুর সংকোচনও বেশি হয়, ফলে ব্যথা তীব্র হয়ে ওঠে।

২. এন্ডোমেট্রিওসিস (Endometriosis)

এটি একটি অবস্থা যেখানে জরায়ুর অভ্যন্তরীণ পর্দা জরায়ুর বাইরে বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থায় তীব্র পিরিয়ডের ব্যথা হতে পারে এবং এটি সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করতে পারে।

৩. ফাইব্রয়েডস (Fibroids)

জরায়ুতে ছোট টিউমারের মতো গঠন (ফাইব্রয়েড) থাকলে পিরিয়ডের সময় ব্যথা বাড়তে পারে। এটি জরায়ুর অভ্যন্তরে বা বাহিরে যে কোনো স্থানে হতে পারে।

৪. পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ (PID)

পেলভিক অঞ্চলে সংক্রমণ থাকলে পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথা হতে পারে। PID সাধারণত যৌনবাহিত রোগের (STDs) কারণে হয়ে থাকে।

৫. অ্যাডেনোমায়োসিস (Adenomyosis)

এই অবস্থায় জরায়ুর পর্দা পেশির গভীরে প্রবেশ করে এবং এর ফলে পিরিয়ডের সময় ব্যথা বাড়তে পারে।

৬. ইন্ট্রাউটেরাইন ডিভাইস (IUD)

জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত কিছু ডিভাইস যেমন IUD পিরিয়ডের সময় ব্যথা বাড়াতে পারে, বিশেষ করে পিরিয়ডের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যে।

৭. বয়স ও হরমোন পরিবর্তন

টিনএজার বা কম বয়সী মেয়েদের মধ্যে প্রায়ই পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথা হয়, কারণ তাদের হরমোনের পরিবর্তন বেশি হয় এবং শরীর নতুন অবস্থার সাথে মানিয়ে নিতে সময় নেয়।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ 

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত ওষুধগুলি ব্যবহার করা হয়:

১. ইবুপ্রোফেন (Ibuprofen)

  • এটি একটি নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (NSAID) যা প্রদাহ কমিয়ে ব্যথা প্রশমিত করে।
  • প্রচলিত ব্র্যান্ড: Advil, Motrin

২. ন্যাপ্রক্সেন (Naproxen)

  • এটিও একটি NSAID যা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সহায়ক।
  • প্রচলিত ব্র্যান্ড: Aleve, Naprosyn

৩. মেফেনামিক অ্যাসিড (Mefenamic Acid)

  • এটি প্রধানত পিরিয়ডের ব্যথা নিরাময়ে ব্যবহৃত হয় এবং NSAID হিসেবে কাজ করে।
  • প্রচলিত ব্র্যান্ড: Ponstel, Meftal

৪. অ্যাসিটামিনোফেন (Acetaminophen)

  • এটি ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, তবে এটি প্রদাহ কমায় না।
  • প্রচলিত ব্র্যান্ড: Tylenol, Paracetamol

৫. অ্যান্টিস্পাসমোডিক ওষুধ (Antispasmodic Drugs)

যেমন Drotaverine (Drotin) এবং Hyoscine (Buscopan) পেশি শিথিল করে এবং জরায়ুর সংকোচন কমিয়ে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

এই ওষুধগুলো সাধারণত ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত, কারণ দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার বা অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ব্যায়াম 

পিরিয়ডের সময় হালকা ব্যায়াম করা শরীরে এন্ডরফিন নামক হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়। এন্ডরফিন হলো একটি প্রাকৃতিক ব্যথা উপশমকারী যা শরীরের যেকোনো ধরনের ব্যথা হ্রাস করতে কার্যকর। হালকা যোগব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

পিরিয়ডের ব্যথা হলে কি বাচ্চা হয় না 


পিরিয়ডের ব্যথা বা মেনস্ট্রুয়াল ক্র্যাম্পস (ডিসমেনোরিয়া) হওয়া সাধারণ এবং প্রায় বেশিরভাগ মহিলার ক্ষেত্রে এটি ঘটে থাকে। এটি জরায়ুর সংকোচনের কারণে হয়, যা পিরিয়ডের সময় জরায়ুর অভ্যন্তরীণ পর্দা (এন্ডোমেট্রিয়াম) ফেলে দেওয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

পিরিয়ডের ব্যথা হওয়া সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এটি একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া এবং এর সাথে বন্ধ্যাত্বের (ইনফার্টিলিটি) কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই।

তবে যদি ব্যথা খুবই তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্যান্য উপসর্গ যেমন ভারী রক্তপাত, অনিয়মিত পিরিয়ড, বা যৌনমিলনের সময় ব্যথা থাকে, তাহলে তা এন্ডোমেট্রিওসিস, পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS), বা পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ (PID) এর মতো সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে, যা সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

তাই, যদি আপনার পিরিয়ডের ব্যথা অত্যন্ত তীব্র হয় বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে একজন গাইনোকোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

পিরিয়ডের ব্যথা হলে মেয়েদের কেমন লাগে

পিরিয়ডের ব্যথা হলে মেয়েদের জন্য এটি শারীরিক ও মানসিকভাবে বেশ কষ্টকর হতে পারে। এই ব্যথার অভিজ্ঞতা একেকজনের জন্য একেক রকম, এবং তীব্রতার তারতম্যও থাকতে পারে। সাধারণত, পিরিয়ডের সময় মেয়েরা নিম্নলিখিত কিছু উপসর্গ অনুভব করতে পারে:
         

১. তলপেটে ব্যথা

পিরিয়ডের সময় জরায়ু সংকোচনের কারণে বেশিরভাগ মেয়েই তলপেটে ব্যথা অনুভব করেন। এই ব্যথা হালকা থেকে মাঝারি হতে পারে, আবার কিছু ক্ষেত্রে তীব্র ও অসহনীয়ও হতে পারে।
ব্যথা সাধারণত পিরিয়ড শুরুর দিনগুলোতে বেশি থাকে, তবে কিছু মেয়ের ক্ষেত্রে পুরো সময়জুড়েই থাকতে পারে।

২. কোমর ও পিঠে ব্যথা

তলপেটের ব্যথার পাশাপাশি কোমর ও পিঠে ব্যথাও খুব সাধারণ। অনেক মেয়ে পিরিয়ডের সময় পিঠের নিচের অংশে টান বা চাপ অনুভব করেন।

৩. পেশি ও অস্থির ব্যথা

পিরিয়ডের সময় কিছু মেয়ের পেশি ও জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে পা ও কোমরের এলাকায়। এর ফলে শারীরিক দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।

৪. বমি বমি ভাব এবং হজমের সমস্যা

পিরিয়ডের সময় অনেক মেয়ে বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, বা বদহজমের সমস্যা অনুভব করেন। এর সাথে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

৫. মাথা ব্যথা ও ক্লান্তি

পিরিয়ডের সময় মাথা ব্যথা বা মাইগ্রেন দেখা দিতে পারে, যা ক্লান্তি ও অবসাদ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া, শক্তিহীনতা বা ঘন ঘন ঘুমানোর প্রবণতাও দেখা যেতে পারে।

৬. মেজাজ খারাপ বা মুড সুইংস

হরমোনের পরিবর্তনের কারণে পিরিয়ডের সময় মেয়েরা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তারা সহজেই উত্তেজিত, দুঃখিত, বা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারেন। মুড সুইংস বা হঠাৎ করে মেজাজ পরিবর্তনের ঘটনাও খুব সাধারণ।

৭. বুক ভারী ও সংবেদনশীলতা

পিরিয়ডের সময় অনেক মেয়েই বুক ভারী এবং সংবেদনশীল অনুভব করেন, যা মাঝে মাঝে অস্বস্তিকর হতে পারে।

৮. ফোলাভাব

পিরিয়ডের সময় পেট ফোলা বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে, যা অস্বস্তিকর মনে হতে পারে এবং পেট ভারী মনে হয়।

৯. চাপা অনুভূতি

কিছু মেয়েরা জরায়ুর সংকোচনের কারণে পেটের নিচের অংশে চাপা অনুভূতি পান, যা কখনও কখনও একধরনের মৃদু কাঁপুনি বা ধাক্কা দেওয়ার মতো অনুভূত হয়।

লেখক এর শেষ কথা 

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা পিরিয়ডের ব্যথা কমানো ঘরোয়া ১০ টি উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।আপনি যদি পোষ্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন আশা করি তাহলে আপনি আপনার সমস্যার সমাধান পেয়ে গেছেন। এরকম আরো নিত্যনতুন পোস্ট দেখতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url