রমজান মাসের ফজিলত ও ইবাদত সম্পর্কে হাদিস

আপনি কি রমজান মাসের ফজিলত ও ইবাদত সম্পর্কে হাদিস জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। আজকে আমরা রমজান মাসের ফজিলত ও এবাদত সম্পর্কে হাদিস বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করব।
 
রমজান মাস একটি পবিত্র মাস, বরকত ময় মাস। রমজান মাসে রোজা রাখা আল্লাহ তা'আলা বিশ্বের মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরজ করেছেন। চলুন তাহলে দেরি না করে দেখে নেওয়া যাক রমজান মাসের ফজিলত ইবাদত সম্পর্কে হাদিস গুলো।

পেজ সূচিপত্র: রমজান মাসের ফজিলত ও ইবাদত সম্পর্কে হাদিস গুলো বিস্তারিত দেওয়া হল:

রমজান মাসের ফজিলত ও ইবাদত


রমজান মাসের রোজা আল্লাহ তা'আলা বিশ্বের মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরজ করেছেন। আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফে বলেন, হে বিশ্বাসী বান্দাগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী গনের ওপর ফরজ  করা হয়েছিল। যাতে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর।
 
রোজা সম্পর্কে হযরত নবী কারীম (সা:) এরশাদ করেছেন, যে লোক পূর্ববিশ্বাসের সাথে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের আশায় রমজানের রোজা রাখবে সে এমন বেগোনাহ্ হয়ে যায়, যেমন মায়ের গর্ভে হতে নিষ্পাপ হয়ে জন্মেছিল।

অন্য হাদিসে নবী কারীম (সা:) ফরমান, যখন রমজান উপস্থিত হয় তখন বেহেশতের দরজা সমূহ খোলা হয় এবং দোজখের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়, আর শয়তানকে বেঁধে রাখা হয়।
রমজান মাসের রোজার পানাহারের হিসাব হবে না। রোজা মানুষকে পাপ কাজ হতে বিরত রাখে, রোজা রাখলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয় ,রিজিক বর্ধিত দিতে হয়, ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায়, রোজাদারদের সকল কাজ ইবাদতের মাধ্যমে গণ্য হয়, আমলে নেকি বাড়িয়ে দেওয়া হয়, আল্লাহর রহমত ও বরকত বৃদ্ধি পায়, সকল ফেরেশতা রোজাদারদের জন্য মাগফিরাত কামনা করে। 

এই মাসের ইবাদতের অন্য মাসের তুলনায় ৭০ গুণ বেশি নেকি লাভ হয়। রোজাদারদের জন্য বেহেস্ত প্রত্যহ সজ্জিত করা হয়, রোজাদারদের ফরিয়াদ কবুল হয়, রমজানের প্রতি শুক্রবার রাতে ৩৯লাখ দোজো কি মুক্তি হয়, এবং তাহাজ্জুতের সময় রোজাদারদের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করা হয়।

রোজার নিয়ত: নাওয়াইতু আন্ আসমা গাদাম্ মিন্ শহরি রামাদানাল মুবারকি ফারযাল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম।

সেহরি খাওয়া: রোজার জন্য শেষ রাতে পানাহার পড়াকে সেহেরী বলা হয়। সেহেরী খাওয়ার সুন্নত। সেহেরী না খাওয়ার ঠিক নয়। কমবেশি যাই হোক সেহরি খেতে হবে। কিন্তু সেহেরী না খেয়ে রোজা ক্ষতি হবে না। তবে শূন্যতের খেলাফত হবে। সুতরাং সেহেরী নিয়তে অবশ্যই কিছু খাবেন।

রোজার ইফতার: দিনভর রোজা রাখার পর সূর্য অস্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা অত্যাধিক সওয়াবের কাজ। ইফতারের মাধ্যমে যেমন পানাহার সম্পন্ন হয় তেমনি অধিক শোয়াবো হয়ে থাকে।

হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যদি কোন ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করায়, তবে সে দোযখের কঠিন আজাব হতে নাজাত পায়।

ইফতারের নিয়ত: আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া তাওয়াক্কালতু আলা রিয্কিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহমান রাহিমীন।

তারাবির নামাজ: রমজানের চাঁদ দেখা যাওয়ার রাত থেকে আবার পরবর্তী চন্দ্র মাসের শাওয়ালের চাঁদ উদয় হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন এশার পর বেতরের পূর্বে তারাবির নামাজ আদায় করতে হয়। এই নামাজ একা কি কিংবা জামাতের সাথে আদায় করা যায়। দুই দুই রাকাতের নিয়তে ২০ রাকাত আদায় করতে হয়। তারাবি সুন্নতে মোআক্কাদা। তাই আদায় না করলে সুন্নতে মোআক্কাদা ত্যাগের গুনাহে গুনাগার হতে হবে।

তারাবির নামাজের ফজিলত


তারাবির নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকী (রা:)ফরমান, আমি রাসুলে কারীম (সা:)কে বলতে শুনেছি, সূর্য আসমানে 'হাযীরাতুল কুদ্দুস' নামক নূর উদ্ভাসিত হবার একটি স্থান আছে। আল্লাহতায়ালা উক্ত স্থান হতে তারাবিহ নামাজীদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দান করে থাকেন।
আর এক হাদিসে উল্লেখ আছে, হযরত আলী(রা:) এরশাদ করেন, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর এর জামানায় সকল মসজিদ তারাবি নামাজের জন্য পরিপূর্ণ হয়ে যেত।
তারাবিহ নামাজ আদায় না করলে রোজার পূর্ণসূয়া পাওয়া যায় না। তারাবির নামাজ একা আদায় করলে বেতর একাকী আদায় করবে আর জামাতে আদায় করলে বেতরের নামাজ ও জামাতে আদায় করবে।

তারাবির নামাজের নিয়ত

উচ্চারণ:নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকআতায় সালাতিত্ তারাবিহি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল ক'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলায় নিয়ত: আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য দুই রাকাত তারাবির নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবার।

তারাবির নামাজের দোয়া: প্রতি চার রাকাত তারাবির নামাজের পর কিছুক্ষণ বসে আরাম করতে হয়। এ সময় নিম্নে দোয়া পড়া যায়-

তারাবির নামাজের মোনাজাত

তারাবির নামাজের চার রাকাত পর পর মোনাজাত করার রীতি আমাদের দেশে চালু আছে। না করলেও কোন ক্ষতি নেই। কেননা, মোনাজাত নামাজের কোন অংশ নয়। তাই জরুরী বা নামাজের কোন অংশ মনে না করে করলে কোন দোষ হবে না। এমনকি একত্রে ২০ রাকাত পড়ে করলেও চলবে।

শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে


শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা সব মাসের মাধ্যে রমজান মাস্কের শ্রেষ্ঠ হিসেবে বরকত ও রহমত দান করেছেন। এই মাসেই শবে কদরের রাত রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষায় উত্তম। এই রাতে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছেন।

 এই রাতের ফজিলত অপরিসীম। এই রাতে যারা জাগ্রত থেকে নফল ইবাদত করবে, তারা হাজার মাসের চেয়েও বেশি ইবাদতের পূর্ণ লাভ করবে। আল্লাহ তায়ালা এই রাতের ফজিলত বর্ণনা করে সূরা কদর নাযিল করেছেন। সূরা কদরের শুধু অর্থ দেওয়া হলো-

নিশ্চয়ই আমি কদরের রাতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি। আর আপনি কি [হে মোহাম্মদ (সা:)] অবগত আছেন যে, কদরের রাত কি ? কদরের রাত হাজার মাস হতেও উত্তম। এই রাতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণও রুহ (জিবরাইল( আল্লাহর আদেশে পৃথিবীর সর্বত্রে অবতীর্ণ করে থাকেন এবং ভোর পর্যন্ত আল্লাহর শান্তি ও সালামত বিরাজিত থাকে।

হযরত মুহাম্মদ (সা:) এরশাদ করেন-

উচ্চারণ: আফজালুল লায়ালী লাইলাতুল কদরি।

অর্থ: "সব রাতের মধ্যে কদরের রাত সর্বোত্তম।" কারণ, এই রাতে নফল ইবাদতে যে রূপ সওয়াব হয় তা অন্য কোন রাতে হয় না।

শবে কদরের নামাজ

কদরে রাতে এশা ও তারাবির নামাজের পর নফল নামাজ আদায় করলে অনেক সওয়াব হয়। এই নামাজ দুই দুই রাকাতে নিয়তে আদায় করতে হয় এবং কমের পক্ষে বারো রাকাত পড়ার নিয়ম রয়েছে। আর অধিক সংখ্যার কোন সীমা নেই, যত বেশি পড়া যায় ততই উত্তম।

এই নামাজের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহার পর তিনবার সূরা কদর এবং তিনবার সূরা ইখলাস পাঠ করতে হয়। যারা সূরা কদর জানেন না তারা শুধু সূরা ইখলাস পড়বে। অন্য সুরা দিয়ে পড়লেও কোন ক্ষতি নেই।

কদরের নামাজের নিয়ত

বাংলা নিয়ত: আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য দুই রাকাত কদরের নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবার।

এ'তেকাফের নিয়ম

রোজা রাখা অবস্থায় নিয়ত করে কিছু সময়ের জন্য ইবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করাকে এতেকাফ বলা হয়। যারা এই এতেকাফের নিয়ত করবেন, তাদের জন্য তিনটি বিষয় দরকার। প্রথমে মসজিদ হতে হবে, দ্বিতীয়ত এতেকফের নিয়ত করতে হবে, তৃতীয় তাদেরকে পাক-পবিত্র হতে হবে।

এতেকাফ তিন প্রকার। যথা: ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা ও মুস্তাহাব। যদি কোন ব্যক্তি এতেকাফের মান্নত করে তবে তা আদায় করা ওয়াজিব ‌ রোজার মাসের শেষ ১০ দিন এতেকাফে করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আর রোজার মাস ব্যতীত অন্য সময় ইতে কাপ করা মুস্তাহাব।

স্ত্রীর লোকেরা ইতেকাফের জন্য মসজিদে যেতে হবে না, তারা ঘরের মধ্যে কোন নির্জন স্থানে ইতেকাফে বসবে। ইতেকাফে অবস্থায় যথাসাধ্য আল্লাহর ইবাদত করবে। বিশেষত নফল নামাজ আদায় এবং কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করবে।

এতেকাফের সময়সীমা কমের পক্ষে তিন দিন তিন রাত আর উর্ধ্বে দশ দিন দশ রাত। তিন দিন তিন রাতের কম হলে ইফতে কাপ শুদ্ধ হবে না। আর রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের এতেকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা এর কেফায়া। 

মসজিদ এলাকার কোন একজনও যদি এই দশ দিন ইতেকাফ না করে তাহলে সে সমাজের সকলেই সুন্নতে মোআক্কাদা পরিত্যাগের গুনাহে গুনাগার হবে। দশ দিনের কম হলে সুন্নতে মুয়াক্কাদা আদায় হবে না।

রোজার জরুরি মাসআলা


রোজার জরুরি মাসআলা: রাতে রোজার নিয়ত করলে তাতে ফরজ পূর্ণ হবে। বেলা দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত রোজার নিয়ত করাও দূরস্ত আছে।

মাসাআলা: রোজার মাসে যদি ফরজ কিনবা রমজানের রোজার নিয়ত না করে শুধু এরূপ নিয়ত করে যে, আমি রোজা রাখব কিংবা রাতের নিয়ত করে যে, আগামী দিন রোজা রাখব এতেও রমজানের রোজায় নিয়ত হবে।

মাসআলা: সাবান মাসে ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেলে রাতে সেহেরী খেয়ে রোজা রাখতে হবে। যদি মেঘের জন্য অথবা অন্য কোন কারণে চাঁদ দেখা না যায় তবে রোজা রাখবে না। কেননা, ২৯ এ সাবানের দিনকে ইয়াওমুশশক বা সন্দেহের দিন বলা হয়। তাই এই দিন রোজা রাখা নিষেধ। এই অবস্থায় শাবান মাস পূর্ণ ৩০ দিনের হিসেব করে রোজা রাখতে হবে।

মাসাআলা: শাবান মাসের 29 তারিখে চাঁদ দেখা না গেলে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত পানাহার না করে চাঁদ দেখার খবরের জন্য অপেক্ষা করবে। চাঁদ দেখার নির্ভরযোগ্য খবর পেলে রোজার নিয়ত করবে নয়তো বা পানাহার করবে।

কাজা রোজার মাসআলা:


কাজা রোজার মাসআলা হল কোন কারণবশত যদি রমজানের কিছু রোজা কিংবা সব রোজা রাখা না যায়, তবে রমজান মাসের পর দেরি না করে কাজা আদায় করতে হবে।

মাসআলা: কাজা রোজার জন্য সেহেরির পর এই নিয়ত করতে হব, সূর্যোদয়ের পরে নিয়ত করলে কাজা আদায় হবে না। তা নফল রোজার মাধ্যমে গণনা হবে এবং পরে ফরজ রোজার কাজা আদায় করতে হবে।

মাসআলা: রমজান মাসের রোজা যতটি ছুটিয় যাই সেগুলোর কাজা একাধারে কিংবা বিভিন্ন তারিখে রাখা জায়েজ হবে। তবে একাধারে রাখা মুস্তাহাব। কাজা রোজা আদাই শেষ না হতেই রমজান মাস উপস্থিত হলে তখন রমজানের রোজা রাখতে হবে। রমজান শেষে আগের রমজানের কাজা রোজা আদায় করবে। কিন্তু এরূপ দেরি করা ঠিক নয়।

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ 

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ গুলো হল: 

  1. রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃত কিছু পানাহার করলে 
  2. কেউ জবরদস্তি ভাবে পানাহার করালে 
  3. যেকোনো লিঙ্গের মাধ্যমে পিচকারী নিলে 
  4. নাক দ্বারা মস্তিষ্কে পানি টেনে নিলে 
  5. নাকের ভেতরে কোন তরল ওষুধ বা তেল প্রবেশ করালে 
  6. শরীরের কোথাও ওষুধ লাগাতে যদি তা ভেতরে প্রবেশ করে 
  7. মুখ ভরে বমি হলে 
  8. রাত বাকি আছে মনে করে শুভ হে সাদিকের সময় সেহরি খেলে 
  9. সূর্য ডুবেছে ধারণা করে সূর্যাস্তের পূর্বে এফতার করলে 
  10. ভুলের কারণে কিছু পানাহার করে রোজা ভেঙে গেছে ভেবে পুন্যপানাহার করলে 
  11. কন্ঠনালীতে কিছু প্রবেশ করলে 
  12. ঘুমের ঘোরে স্ত্রী সহবাস করলে 
  13. সমগ্র রমজান মাসে একটি রোজা ও নিয়ত না করলে 

উপরোক্ত কারণগুলো রোজা ভঙ্গ হবে কিন্তু ইফতার করবে না, সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে সময় মত ইফতার করবে এবং রমজানের পরে এই রোজার কাজা আদায় করবে।

যে কারণে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ 

যে কারণে রোজা ভঙ্গ করা যায় সেগুলো হল:

  • রোজা অবস্থায় যদি কঠিন রোগ আক্রান্ত হয় এবং ওষুধ সেবন না করলে রোগবৃদ্ধি পেয়ে মৃত্যু ঘটার আশঙ্কা হয়, তবে রোজা ভঙ্গ করা যায়।
  • গর্ভবতী মহিলার নিজের গর্ভের সন্তানের ক্ষতির সম্ভাবনা হলে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ, কিন্তু পরে কাজা করতে হবে।
  • বিপাশায় পানি পান না পড়লে যদি মৃত্যুর আশঙ্কা হয়, তবে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ হবে। তবে পরে কাজা করতে হবে।

যে কারণে রোজা না রাখা জায়েজ 

যে সকল কারণে রোজা না রাখা জায়েজ 

  • রোজা রাখলে রোগ বৃদ্ধি অবনতি বা আরোগ্য লাভের দেরি অথবা মৃত্যুর আশঙ্কা হলে রোজা না রাখা জায়েজ।
  • কেউ যদি রোগ বা দুর্বলতার জন্য রোজা রাখতে না পারে কিংবা রোজা রাখলে রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা হয়, তবে এই অবস্থায় রোজা না রাখা যায়। তবে পূর্ণ সুস্থতা লাভের পর রোজার কাজা করতে হবে।
  • মুসাফির হালাতে কষ্ট হলে রোজা না রাখা জায়েয, তবে বাড়িতে ফেরার পর রমজানের কাজা রোজা আদায় করতে হবে। কিন্তু সফরে ১৫ বা তার বেশি দিন অবস্থান করার নিয়ত করলে রোজা রাখতে হবে। যেহেতু তখন সে মুসাফির থাকবে না।
  • গর্ভবতী স্ত্রীলোকের গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা হলে কিংবা তার নিজের স্বার্থের ক্ষতির কারণ হলে রোজা না রাখা জায়েয। তবে সন্তান প্রসবের পর নেপাশর সময়সীমা পার হয়ে গেলে কাজা করতে হবে। মহিলার বুকের দুধ কমে গিয়ে দুগ্ধপায়ী শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা হলে রোজা না রাখা জায়েয ।তবে পরে কাজা করতে হবে।

রোজার মাকরুহ সমূহ গুলো 

  1. রোজার মাকরূহ সমূহ গুলো নিচে বিস্তারিত দেওয়া হল: পরনিন্দা করা 
  2. কোন জিনিসের স্বাদ গ্রহণ করা 
  3. কোন বস্তূ চবণ করা 
  4. রোজা অবস্থায় একেবারে চুপ করে থাকা 
  5. কোন মাজন দ্বারা দাঁত মাজা 
  6. পানিতে নেমে বায়ু ছাড়া 
  7. শরীরে ভেজা কাপড় জড়িয়ে রাখা 
  8. গালিগালাজ করা 
  9. মিথ্যা কথা বলা 
  10. ইচ্ছা করে বমি করা 
  11. যে কারণে রোজা মাকরূহ হয় না 
  12. রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে 
  13. ভুলবশত কিছু পানাহার করলে 
  14. কোন মেয়ে লোকের প্রতি দৃষ্টিপাত করায় বীর্য নির্গত হলে 
  15. শরীরে তেল মালিশ করলে
  16. কণ্ঠনালীতে ধুলাবালি প্রবেশ করলে 
  17. মেসওয়াক করলে 
  18. থুতু গিলে ফেললে 

এ সমস্ত কারণে রোজা মাখরুক হয় না। 

রোজার ফিতরার মাসআলা 

পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর রহমত বরকত লাভ করে তার আদেশ সফলভাবে সম্পন্ন করার খুশিতে বিশ্বের মুসুলিমগন নিজের এবং পরিবার বর্গের পক্ষ হতে বাধ্যতামূলকভাবে যে দান খয়রাত করতে হয় তাকে ফিতরা বলা হয়।

মাসআলা: ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় যে মুসলমান ব্যক্তি জীবিকা নির্বাহের আবশ্যকারী উপকরণ ব্যতীত সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ কিংবা সারে বাবার নতুন সম্পদের মালিক থাকেন তার জন্য ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব।

মাসআলা: যদি কেউ ঋণগ্রস্ত থাকে আর ঋণ বাদ দিয়েও সে সাহেবের নেশাপ অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলার রুপার মূল্য পরিমান অর্থ সম্পদের মালিক থাকেন, তবে তার ফিতরা ওয়াজিব হবে, নতুবা নয়।

মাসআলা: ঈদের নামাজের পূর্বে ফিতরা আদায় করা মুস্তাহাব। পরেও দেওয়া জায়েজ আছে। যদি কেউ ঈদের পূর্বে রমজান মাসে থাকতে ফিতরা দিয়ে দেয়, তাও জায়েজ হবে। আবার ঈদের দিন এরপরও ফিতরা দেওয়া জায়েজ।

নফল রোজার মাসআলা 

যদি নির্দিষ্ট নিয়ত করে যে, আমি একটি নফল রোজা রাখব, তা জায়েজ হবে এবং যদি বলে, আমি নফল রোজা রাখব, তবে তাও জায়েজ হবে। রাতে নিয়ত না করলে দিনে দুপুরের পূর্বে নিয়ত করলেও জায়েজ হবে।

বছরে পাঁচ দিন দুই ঈদের দিন এবং কুরবানী ঈদের পরে তিনদিন রোজা রাখা হারাম। এই পাঁচ দিন বাদ দিয়ে বছরের যে কোন দিন নফল রোজা রাখা জায়েজ। নফল রোজা যত বেশি রাখবে, তত বেশি সওয়াব হবে।
যদি কেউ ঈদের দিন রোজা রাখার মান্নত করে, তবুও ওই দিন রোজা রাখা হারাম। পরে যে কোন একদিন রোজা রেখে মান্নত পূরণ করবে। কেউ যদি সারা বছর রোজা রাখার মান্নত করে, তাহলেও ওই পাঁচ দিন বাদ দিয়ে রোজা রাখতে হবে।

কেউ নফল নিয়তে রোজা রেখে দিনের বেলা ভেঙে ফেললে কাজা আদায় করা ওয়াজিব হবে। ইফতারি স্বামীর হুকুম ব্যতীত নফল রোজা রাখতে পারবে না, নফল রোজা রাখলেও স্বামীর হুকুম করলে সে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে, তবে অন্য কোন দিন ওই রোজা কাজা আদায় করবে।

কাফফারা রোজার মাসআলা 

কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় রমজান মাসের রোজা ভেঙে ফেল, তার কাফফারা স্বরূপ একাধারে ষাটটি রোজা রাখতে হবে ‌ মাঝের দুই একটি ভেঙে ফেললে কাফফারা আদায় হবে না ‌ পূর্ণ প্রথম হতে রাখতে হবে। যদি মাঝখানে স্ত্রী লোকের হায়েজ হয় তবে তা মাফ, প্রথম থেকে শুরু করতে হবে না।

কিন্তু হায়েজ হতে পাক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোজা আরম্ভ করে ৬০ টি রোজা পূরণ করতে হবে।কাফফারা রোজার মাঝখানে নেফাত শুরু হলে কাফফারা আদায় হবে না। পাক হলে পরে প্রথম হতে রোজা রাখতে হবে।

মাসআলা: যদি কেউ কাউসার আর রোজা রাখতে অক্ষম হয়, তবে ফিদইয়া আদায় করতে হবে। এটি আদায়ের জন্য ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা পরিতৃপ্তি করে খাওয়াতে হবে। সাতজন মিসকিন নিয়ে সবাই পূর্ণবয়স্ক হতে হবে, অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে তা আদায় করা হবে না।

যদি কেউ খাবার খাওয়ানোর পরিবর্তে চাল গম ইত্যাদি দিতে চায় তাও জায়েজ হবে। কিন্তু তা সাদকায়ে ফিতরার সমপরিমাণ হতে হবে। একজন মিসকিন কে একসাথে ৬০ দিনের ফিদইয়া দিয়ে দিলে আদায় হবে না, বরং সাত বাড়ে দিতে হবে।

তবে একদিনে ৬০ জন মিসকিন কে আলাদাভাবে একজনের ফিদইয়া দেওয়া জায়েজ হবে। একদিনে ফিদইয়া একজন মিসকিন কে দিতে হবে দুইজনকে দিলে জায়েজ হবে না।

শাওয়াল মাসের ফজিলত ও ইবাদত 

ভাওয়াল মাসের চাঁদের রাতে কিংবা ঈদুল ফিতরের নামাজের পর চার রাকাত নামাজ আদায় করা যায়। পতিরাকাতে সুরা ফাতেহার পর একশ বার করে সূরা ইখলাস পাঠ করতে হয়। এই নামাজ আদায় কারীর জন্য বেহেস্তের সকল দরজা খুলে দেওয়া হবে এবং দোজখের সকল দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। 

আর ওই নামাজির নিজবেহত না দেখা পর্যন্ত মৃত্যু হবে না। হযরত রাসূলে কারীম(সা:) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে ইন্তেকাল করবে, সে শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। অন্য এক হাদিসে তিনি আরো এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসের গুনাহের কাজ পরিহার করে চলবে, তার জন্য আল্লাহতালা বেহেশ।

ঈদুল ফিতরের নামাজ 

এক মাস রোজা রাখার পর বিশ্বব্যাপী সকল মুসলমানের ঘরে ঘরে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়ে থাকে। ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলেই ঈদের খুশিতে শরিক হয়। এই দিনে ধনবান লোকেরা গরীবদেরকে সাদকায়ে ফের ভেতরা দান করে বলে এর নাম ঈদুল ফিতর।
এই দিনে নামাজের পূর্বে যথাসাধ্য নতুন বা পরিষ্কার পোশাক পরিচ্ছদ ও খুসবু ব্যবহার করে ঈদের ময়দানে যেতে হয় এবং পথিমধ্যে নিম্নে তাকবির বলতে হয়-আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহি হামদ।

লেখক এর শেষ কথা 

প্রিয় পাঠক, আপনি যদি আজকের পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তাহলে আপনি রমজান মাসের ফজিলত ও ইবাদত সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এরকম আরো নিত্যনতুন পোস্ট দেখতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url