গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা


গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি ঠিক জায়গাতে এসেছেন। আজকে আমরা গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার উপকারিতা এবং উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। গর্ভাবস্থায় মা ও সন্তানের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।    
গর্ভাবস্থায়-বাদাম-খাওয়ার-উপকারিতা-এবং-অপকারিতা
এর মধ্যে বাদাম একটি অত্যন্ত কার্যকর এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার, যা গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে মায়ের শারীরিক সুস্থতা এবং সন্তানের গঠন ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাদাম প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের চমৎকার উৎস। 

পেজ সূচিপত্র:গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার উপকারিতা 

গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার  উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়, বাদামে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন—ভিটামিন, মিনারেল, এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, যা মায়ের শক্তি বাড়ায় এবং শিশুর বিকাশে সহায়ক। গর্ভবস্থায় বাদাম খাওয়ার উপকারিতা গুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে
বাদামে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত বাদাম খেলে শিশুর মানসিক বিকাশ ভালো হয়।
হাড় মজবুত করে
বাদামের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম মায়ের এবং শিশুর হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।
রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে
গর্ভাবস্থায় আয়রন ঘাটতির কারণে রক্তস্বল্পতা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আয়রনসমৃদ্ধ বাদাম রক্তের হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং এই সমস্যা প্রতিরোধ করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকে। বাদামে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং প্রোটিন দীর্ঘ সময় ক্ষুধা নিবারণ করে এবং অতিরিক্ত খাবারের প্রবণতা কমায়।
মানসিক চাপ কমায়
বাদামে থাকা ভিটামিন বি এবং ম্যাগনেশিয়াম মানসিক চাপ কমায় এবং মায়ের মেজাজ ভালো রাখতে সহায়ক।
হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে
বাদামে ফাইবার থাকে, যা হজম শক্তি উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে বাদাম কার্যকর। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
বাদামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ত্বকের জন্য উপকারী
ভিটামিন ই সমৃদ্ধ বাদাম ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি মায়ের ত্বকের শুষ্কতা এবং দাগ কমায়।

গর্ভাবস্থায় বাদামের পুষ্টিগুণ

বাদাম বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে পরিপূর্ণ, যা গর্ভাবস্থার সময় মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
প্রোটিন
বাদামে প্রচুর প্রোটিন থাকে, যা শরীরের কোষ এবং টিস্যু তৈরিতে সাহায্য করে। শিশুর বৃদ্ধিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ফাইবার
ফাইবারসমৃদ্ধ বাদাম হজম শক্তি উন্নত করে এবং গর্ভাবস্থায় সাধারণ একটি সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রতিরোধে সহায়ক।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
অলিভ বা আখরোটের মতো বাদামে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা শিশুর মস্তিষ্ক এবং চোখের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ।
ভিটামিন ই
বাদামে ভিটামিন ই থাকে, যা শিশুর ত্বকের গঠন এবং মায়ের ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম
বাদাম ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ভালো উৎস, যা হাড় এবং দাঁতের গঠনে সহায়ক।
আয়রন
আয়রনসমৃদ্ধ বাদাম রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে এবং গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
বাদামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মায়ের শরীরে ফ্রি র‍্যাডিকালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষা দেয়।

গর্ভাবস্থায় কোন বাদাম খাওয়া উচিত

গর্ভাবস্থায় বাদাম একটি চমৎকার খাবার, যা মা ও শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। এটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ, মায়ের শক্তি বৃদ্ধি, এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে সহায়ক। তবে সঠিক পরিমাণে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাদাম খাওয়া উচিত। এটি গর্ভাবস্থার স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অংশ হিসেবে নিশ্চিতভাবে যোগ করা যায়। 
    
গর্ভাবস্থায়-বাদাম-খাওয়ার-উপকারিতা-এবং-অপকারিতা

  1. আখরোট ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের চমৎকার উৎস, যা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক।
  2. কাজু বাদামে প্রোটিন এবং আয়রন থাকে, যা শক্তি বাড়ায় এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।
  3. বাদাম (আলমন্ড)বাদামে ভিটামিন ই এবং ক্যালসিয়াম থাকে, যা ত্বক এবং হাড়ের জন্য উপকারী।
  4. পেস্তাপেস্তা ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা হজম শক্তি বাড়ায়।
  5. বাদাম খাওয়ার সময় সতর্কতাঅতিরিক্ত বাদাম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। বেশি বাদাম খেলে ওজন বাড়া বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
  6. অ্যালার্জির ঝুঁকি: যদি বাদামে অ্যালার্জি থাকে, তবে তা খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
  7. প্রক্রিয়াজাত বাদাম এড়িয়ে চলুন: লবণাক্ত বা ভাজা বাদাম খাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে অতিরিক্ত সোডিয়াম থাকতে পারে।
  8. পরিমিত পরিমাণে খাওয়া: প্রতিদিন ১-২ মুঠো বাদাম যথেষ্ট।

বাদামের পুষ্টিগুণ (প্রতিটি বাদামের প্রকারভেদ অনুযায়ী)

আখরোটের পুষ্টিগুণ ও পরিমাপ
 
উপাদান(প্রতি ২৮ গ্রাম) পরিমাণ
ক্যালোরি ১৮৫
প্রোটিন ৪ গ্রাম
অমেগা-৩ ফ্যাট অ্যাসিড ২.৫গ্রাম
ফাইবার
ম্যাগনেসিয়াম ৪৫মি.গ্রা
ভিটামিন বি৬ ০.২মি.গ্রা
কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ ও পরিমাপ
উপাদান(প্রতি ২৮ গ্রাম) পরিমাণ
ক্যালোরি ১৫৫
প্রোটিন ৫গ্রাম
ফ্যাট ১২গ্রাম
আয়রন ১৯
জিঙ্ক ১.৬মি.গ্রা
বাদাম (আলমন্ড) পুষ্টিগুণ ও পরিমাপ
উপাদান(প্রতি ২৮ গ্রাম) পরিমাণ
ক্যালোরি ১৬১
প্রোটিন ৬গ্রাম
ফাইবার ৩৫গ্রাম
ভিটামিন ই ৭.৩ মি.গ্রা
ম্যাগনেসিয়াম ৭৬মি.গ্রা
পেস্তা বাদামের পুষ্টিগুণ ও পরিমাপ
উপাদান(প্রতি ২৮ গ্রাম) পরিমাণ
ক্যালোরি ১৫৬
প্রোটিন ৬গ্রাম
ফাইবার ৩গ্রাম
পটাসিয়াম ২৯১ মি.গ্রা
অ্যান্টঅক্সিডেন্ট উচ্
চিনাবাদামের পুষ্টিগুণ ও পরিমাপ 
উপাদান(প্রতি ২৮ গ্রাম) পরিমাণ
ক্যালোরি ১৬১
প্রোটিন ৭গ্রাম
ফাইবার ২৪গ্রাম
ফলেট ৩৩ মি.গ্রা
ম্যাগনেসিয়াম ৪৮

গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার সঠিক পরিমাণ 

প্রতিদিন বাদামের আদর্শ পরিমাণ:
২৮-৩০ গ্রাম বাদাম (প্রায় এক মুঠো) গর্ভাবস্থায় খাওয়া যথেষ্ট।
বাদামের মিশ্রণ (আখরোট, কাজু, পেস্তা, বাদাম, এবং চিনাবাদাম) স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর।
সময় ও পদ্ধতি:
সকাল বা বিকেলে স্ন্যাকস হিসেবে:
খালি পেটে বাদাম খাওয়া এড়িয়ে চলুন। খাবারের মাঝে স্ন্যাকস হিসেবে এটি আদর্শ।
রাতে:
রাতে হালকা খাবারের পরে বাদাম খাওয়া হজমে সাহায্য করে এবং ঘুম ভালো করে।
স্মুদি বা দুধের সঙ্গে:
বাদাম দুধের সঙ্গে বা স্মুদির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
রোস্ট করা বাদাম:
লবণবিহীন রোস্ট করা বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার অপকারিতা

বাদাম পুষ্টির একটি চমৎকার উৎস হলেও, গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে বা অতিরিক্ত বাদাম খাওয়ার ফলে কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। নিচে গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা এবং সতর্কতা আলোচনা করা হয়েছে।
গর্ভাবস্থায় বাদামের অপকারিতা
  
গর্ভাবস্থায়-বাদাম-খাওয়ার-উপকারিতা-এবং-অপকারিতা

  1. অ্যালার্জি ঝুঁকিবাদামে থাকা প্রোটিন কিছু মানুষের জন্য অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।
  2. অ্যালার্জি লক্ষণগুলো: চুলকানি, র‍্যাশ, পেটের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বা তীব্র ক্ষেত্রে অ্যানাফাইল্যাক্সিস।
  3. যাদের বাদামে অ্যালার্জি আছে, তাদের গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়া এড়ানো উচিত।
  4. হজমজনিত সমস্যাবাদামে থাকা ফাইবারের পরিমাণ বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত বাদাম খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে।
  5. এর ফলে পেট ফাঁপা, গ্যাস, অথবা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  6. ওজন বৃদ্ধিবাদামে ক্যালোরি এবং ফ্যাটের পরিমাণ বেশি।
  7. অতিরিক্ত বাদাম খেলে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের ফলে ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকে, যা গর্ভাবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  8. প্রক্রিয়াজাত বাদামের ক্ষতিলবণাক্ত বা ভাজা বাদাম বেশি খেলে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  9. অতিরিক্ত লবণ গর্ভাবস্থায় পায়ে বা শরীরে ফোলাভাব বাড়াতে পারে।
  10. সালমোনেলা বা অন্য জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকিকিছু বাদামে, বিশেষত চিনাবাদামে, সালমোনেলা জীবাণু থাকতে পারে।
  11. অপরিষ্কার বা সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না করা বাদাম খাওয়া হলে সংক্রমণ হতে পারে।
  12. খাদ্যতালিকায় ভারসাম্যের অভাবশুধুমাত্র বাদাম নির্ভর খাবার গ্রহণ করলে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা দিতে পারে।
এটি শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
কোন বাদাম গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে?লবণাক্ত বা মসলাযুক্ত বাদাম:
এগুলোতে অতিরিক্ত সোডিয়াম থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
ভাজা বাদাম:
ভাজার ফলে বাদামের পুষ্টিগুণ কিছুটা নষ্ট হয় এবং এতে অতিরিক্ত ফ্যাট যোগ হয়।
কাঁচা বাদাম:
যদি সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা হয়, তাহলে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকতে পারে।
সতর্কতা ও পরামর্শ
  • সঠিক পরিমাণে বাদাম খাওয়াপ্রতিদিন ২৮-৩০ গ্রাম বাদাম (এক মুঠো) যথেষ্ট।
  • অতিরিক্ত বাদাম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • অ্যালার্জি পরীক্ষাগর্ভাবস্থার আগে বা সময়ে যদি বাদামে অ্যালার্জি থাকে, তবে তা খাওয়া এড়ান।
  • পরিবারের মধ্যে কারও বাদামের অ্যালার্জি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • প্রাকৃতিক বাদাম বেছে নিনলবণবিহীন এবং ভাজা বাদামের পরিবর্তে কাঁচা বা সামান্য রোস্ট করা বাদাম খান।
  • প্রক্রিয়াজাত বাদাম এড়িয়ে চলুন।
  • তাজা ও পরিচ্ছন্ন বাদাম খানবাদাম ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে খান।
  • পুরনো বা আর্দ্র বাদাম এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে ছত্রাক (mold) থাকতে পারে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ নিনযেকোনো নতুন খাদ্যাভ্যাস শুরু করার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
  • যদি গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বা অন্য কোনো বিশেষ অবস্থা থাকে, তবে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসারে বাদাম খান।
গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হলেও অতিরিক্ত বা অসতর্কতায় এটি অপকার বয়ে আনতে পারে। সঠিক পদ্ধতিতে এবং পরিমিত পরিমাণে বাদাম খেলে মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তবে অ্যালার্জি,ওজন বৃদ্ধি, বা অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খাওয়ার অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কিছু খাবার গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কাঁচা বা আধাপাকা পেঁপে গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এতে এমন কিছু উপাদান থাকে যা মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
কাঁচা পেঁপেতে থাকা ক্ষতিকর উপাদান
পাপেইন:কাঁচা পেঁপেতে থাকা পাপেইন গর্ভাবস্থায় জরায়ুর সংকোচন (uterine contractions) ঘটাতে পারে।
এটি প্রসব বেদনা শুরু করতে পারে বা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ল্যাটেক্স:কাঁচা পেঁপেতে ল্যাটেক্স থাকে, যা প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন এবং অক্সিটোসিন নামক রাসায়নিক সক্রিয় করে।
এই রাসায়নিক জরায়ু সংকুচিত করে গর্ভপাত বা প্রিম্যাচিউর ডেলিভারির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
এস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়ায়:কাঁচা পেঁপের ল্যাটেক্স শরীরে এস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা গর্ভাবস্থায় ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।
অন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর:পেঁপেতে থাকা ফাইবার বেশি মাত্রায় হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
এটি পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, বা ফোলাভাবের কারণ হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খাওয়ার ঝুঁকি

গর্ভপাতের ঝুঁকি:জরায়ুর সংকোচন বাড়িয়ে কাঁচা পেঁপে গর্ভপাত ঘটাতে পারে।
বিশেষত গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে (First Trimester) এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক।
প্রিম্যাচিউর লেবার :ল্যাটেক্স এবং পাপেইন জরায়ুকে সক্রিয় করে প্রিম্যাচিউর লেবারের ঝুঁকি বাড়ায়।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা:কাঁচা পেঁপেতে থাকা উপাদান মায়ের হরমোনে প্রভাব ফেলে, যা গর্ভাবস্থার জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
অন্ত্রের অস্বস্তি:পেঁপেতে থাকা শক্ত ফাইবার হজমের সমস্যা তৈরি করে, যা মায়ের শরীরের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে।
এলার্জি:কিছু গর্ভবতী নারীর শরীরে ল্যাটেক্স বা পেঁপের অন্যান্য উপাদানের কারণে এলার্জি হতে পারে।
কাঁচা পেঁপে কেন এড়ানো উচিত?প্রথম ত্রৈমাসিকে:গর্ভস্থ শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি হওয়ার সময়ে কাঁচা পেঁপের রাসায়নিক পদার্থ ক্ষতিকর হতে পারে।
দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে:জরায়ুর সংকোচন গর্ভকালীন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

পাকা পেঁপে কি নিরাপদ?

পাকা পেঁপে সাধারণত গর্ভাবস্থায় নিরাপদ, কারণ এতে ল্যাটেক্স বা পাপেইনের মাত্রা নেই বা খুব কম। তবে এটি পরিমাণমতো খাওয়া উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সতর্কতা ও পরামর্শকাঁচা বা আধাপাকা পেঁপে এড়িয়ে চলুন।
পাকা পেঁপে খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন যাতে গর্ভাবস্থার সব পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়।
যদি পেঁপে খাওয়ার পর কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এতে থাকা পাপেইন এবং ল্যাটেক্স মায়ের এবং গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নিরাপদ গর্ভাবস্থার জন্য কাঁচা পেঁপে এড়িয়ে পাকা পেঁপে বা অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাদ্যতালিকা তৈরি করা সেরা পন্থা।

লেখকের শেষ কথা  

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আলোচনা করেছি গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে। আপনি যদি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে আপনি গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। গর্ভ অবস্থায় প্রতিটি মেয়ের একটু বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন সে কি খাবে না খাবে তার ওপর গর্ভে শিশুর বেড়ে ওঠা নির্ভর করে তাই আমাদের উচিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এ সময়ে একটি খাবার রুটিন তৈরি করে নেওয়া। আমাদের ওয়েবসাইডে এইরকম আরো তথ্যমূলক আর্টিকেল রয়েছে যা আপনি ঘুরে দেখতে পারেন আশা করছি আপনার উপকারে আসবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url