গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার উপকারিতা গর্ভাবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যখন একজন
মায়ের সুস্বাস্থ্য শুধুমাত্র তার নিজের নয়, তার গর্ভস্থ শিশুর সুস্থ বিকাশের
জন্যও অপরিহার্য। দুধ গর্ভাবস্থার সময় একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে
বিবেচিত হয়।
এতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন
ডি, এবং অন্যান্য উপাদান রয়েছে, যা গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই
প্রবন্ধে গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার প্রধান উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
পেজ সূচিপত্র: গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
ক্যালসিয়াম আছে যা কিনা হার মজবুত করতে সাহায্য করে থাকে। দুধ একটি আদর্শ খাবার।
গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মেয়েরই দুধ খাওয়া অনেক জরুরী। গর্বের শিশুর হাড় গঠনে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে দুধ। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা
হলো:
- ক্যালসিয়ামের উৎস দুধ ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা গর্ভাবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভস্থ শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠন করে। গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে শিশুর হাড়ের বিকাশ দ্রুত হয়। দুধ থেকে প্রাপ্ত ক্যালসিয়াম শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়তা করে। মায়ের হাড়ের সুরক্ষা: যদি মা পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ না করেন, তাহলে শরীর শিশুর প্রয়োজন মেটাতে মায়ের হাড় থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করে। এটি ভবিষ্যতে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
- প্রোটিনের চাহিদা পূরণ গর্ভাবস্থায় প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন গর্ভস্থ শিশুর কোষ ও টিস্যুর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন দুধ পান করার মাধ্যমে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। দুধে থাকা প্রোটিন শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ও মায়ের শরীরের কোষ পুনর্গঠনে সহায়ক।
- ভিটামিন ডি সরবরাহ দুধ ভিটামিন ডি-এর একটি ভালো উৎস। ভিটামিন ডি গর্ভস্থ শিশুর হাড়ের বিকাশে সহায়ক। এটি রিকেটসের মতো হাড়ের রোগ প্রতিরোধ করে। গর্ভাবস্থায় ভিটামিন ডি-এর অভাব গর্ভস্থ শিশুর হাড় দুর্বল করে তুলতে পারে। ভিটামিন ডি-এর অভাবে মায়ের শরীরে ক্লান্তি, হাড়ে ব্যথা বা মানসিক অস্থিরতা হতে পারে। নিয়মিত দুধ পান করলে এই সমস্যা অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়।
- ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়ামের ভূমিকা দুধে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ: গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ মা এবং শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। দুধে থাকা এই খনিজ উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। রক্ত সঞ্চালন উন্নত করা: পটাসিয়াম রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখে এবং পেশির কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
- হজম ক্ষমতা বাড়ানো গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েরা হজমের সমস্যায় ভোগেন। দুধে থাকা প্রোবায়োটিক উপাদান হজম উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক। গরম দুধ পান করলে অন্ত্রের গতি বাড়ে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতে সহায়তা করে।
- হাইড্রেশন এবং শক্তি সরবরাহ দুধ একটি প্রাকৃতিক শক্তি সরবরাহকারী পানীয়। গর্ভাবস্থায় শরীরকে সুস্থ রাখতে হাইড্রেশন অপরিহার্য। দুধে প্রায় ৮৭% পানি থাকে, যা শরীরের পানির অভাব পূরণে সহায়ক। এছাড়া, এতে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে, যা তাত্ক্ষণিক শক্তি সরবরাহ করে।
- মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি দুধে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রিপটোফ্যান মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এটি সেরোটোনিন উৎপন্ন করে, যা ভালো মেজাজ বজায় রাখতে সহায়তা করে। দুধ পান করলে গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ হ্রাস পায়।
- ভ্রূণের সুস্থ মস্তিষ্ক বিকাশ দুধে উপস্থিত আয়োডিন এবং ভিটামিন বি১২ গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গর্ভাবস্থায় আয়োডিনের অভাব শিশুর বুদ্ধিমত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ভিটামিন বি১২ নার্ভ সিস্টেমের গঠন এবং কার্যক্রমে সহায়ক।
- রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা একটি সাধারণ সমস্যা। দুধে থাকা আয়রন এবং ফোলেট রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফোলেট শিশুর নিউরাল টিউব গঠন সঠিকভাবে করতে সহায়ক। রক্তস্বল্পতা থাকলে মা ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট এবং দুর্বলতায় ভুগতে পারেন। দুধ এই সমস্যাগুলো কমাতে ভূমিকা রাখে।
- ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি গর্ভাবস্থায় মায়ের ত্বকে অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। দুধে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের কোষগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এটি ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
গর্ভাবস্থায় কীভাবে দুধ পান করবেন
গর্ভাবস্থায় যেভাবে দুধ পান করবেন গর্ভাবস্থায় দুধ একটি অপরিহার্য খাদ্য। এটি
কেবল গর্ভবতী মায়ের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, গর্ভস্থ শিশুর
সামগ্রিক বিকাশের জন্যও অপরিহার্য। তবে, প্রতিটি মা এবং শিশুর প্রয়োজন আলাদা,
তাই গর্ভাবস্থায় খাদ্যাভ্যাস নিয়ে সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক
পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত দুধ পান করুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায়
রাখুন।
- সময়: প্রতিদিন সকালে এবং রাতে দুধ পান করা ভালো।
- পরিমাণ: দিনে ২-৩ গ্লাস দুধ পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- অতিরিক্ত চিনি যোগ না করা: চিনি ছাড়া দুধ পান করলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- অ্যালার্জি থাকলে সতর্ক থাকুন: যদি দুধ থেকে অ্যালার্জি হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
প্রতি এক গ্লাসে (২৫০গ্রাম) দুধে পুষ্টিগুণের পরিমাণ
দুধের পুষ্টি উপাদান এর প্রকারভেদে (পূর্ণচর্বিযুক্ত, কমচর্বিযুক্ত, বা স্কিমড) সামান্য পরিবর্তিত হয়। নিচে সাধারণত পূর্ণচর্বিযুক্ত গরুর দুধের পুষ্টিগুণ দেওয়া হলো:উপাদান | পরিমাণ | উপকারিতা |
---|---|---|
ক্যালরি | ১৯৪ | শক্তি সরবারহ করে এবং শরীরকে সক্রিয় রাকেএ। |
প্রোটিন | ৮গ্রাম | পেশি গঠনে সহায়ক এবং কোষ পুনগঠনে কাযকর। |
ক্যালসিয়াম | ৩০০মিলিগ্রাম | হাড় ও দাঁতের দৃঢ়তা বজায় রাখে। |
ফ্যাট | ৮গ্রাম | শক্তি প্রদান করে এবং স্নায়ুর কাযক্রম উন্নত করে। |
স্যাচুরেটেড ফ্যাট | ৫গ্রাম | পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে শক্তি বাড়ায়। |
কাবোহাইড্রেট | ১২গ্রাম | তাতক্ষনিক শক্তি সরবারহ করে । |
চিনি | ১২গ্রাম | শরীরে প্রাকৃতিক ভাবে শক্তি উৎপাদন করে। ন |
ভিটামিন সি | ২.৫মাইক্রোগ্রাম | ক্যালসিয়ামের শোষণে শায়ক। |
ভিটামিন বি৬ | ১.১মাইক্রোগ্রাম | স্নায়ুত্নন ও রক্তকণিকা উৎপাদনে কাযকর। |
পটাসিয়াম | ৩৬৬মিলিগ্রাম | রক্তচাপ নিয়ন্তন এবং পেশি কাযক্রমে সাহায্য করে। |
ফসফরাস | ২২২মিলিগ্রাম | শক্তি উৎপাদন এবং হাড়ের গঠনে সহায়ক। |
ম্যাগনেসিয়াম | ২৪মিলিগ্রাম | পেশি এবং স্নায়ুর কাযক্ষমতা বাড়ায়। |
জিস্ক | ১ | রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে |
গর্ভাবস্থায় দুধে সমস্যার কারণ
গর্ভাবস্থায় দুধ একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর খাবার হলেও, সবার জন্য এটি উপকারী
নাও হতে পারে। কিছু নারী দুধ খাওয়ার পর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন। এই
সমস্যাগুলি মূলত দুধে থাকা প্রাকৃতিক চিনি (ল্যাকটোজ), প্রোটিন, বা অন্যান্য
উপাদানের কারণে হতে পারে। এখানে গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার ফলে কারা সমস্যার
সম্মুখীন হতে পারেন এবং এর সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হলো। দুধ খাওয়ার ফলে যে
সমস্যাগুলি হতে পারে
- ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স অনেকের শরীরে ল্যাকটোজ হজম করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ল্যাক্টেজ এনজাইম তৈরি হয় না। লক্ষণসমূহ: পেট ফাঁপা গ্যাস ডায়রিয়া পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি কারণ: দুধে থাকা ল্যাকটোজ (প্রাকৃতিক চিনি) হজম করতে না পারার কারণে এই সমস্যা হয়।
- দুধে অ্যালার্জি দুধে থাকা প্রোটিন, বিশেষত কেসিন বা ওয়েহ প্রোটিনের প্রতি অ্যালার্জি থাকলে সমস্যা হতে পারে। লক্ষণসমূহ: ত্বকে চুলকানি বা র্যাশ শ্বাসকষ্ট চোখ বা ঠোঁট ফুলে যাওয়া বমি বা পেটে ব্যথা কারণ: শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুধের প্রোটিনকে ক্ষতিকারক পদার্থ হিসেবে চিহ্নিত করে।
- গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা গর্ভাবস্থায় হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে অনেক নারীর হজমশক্তি দুর্বল হয়। ফলে দুধ খাওয়ার পর গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি বাড়তে পারে। লক্ষণসমূহ: পেটে জ্বালাপোড়া বুক জ্বালা ঢেকুর বা গ্যাস জমা
- ওজন বৃদ্ধি বা স্থূলতা পূর্ণচর্বিযুক্ত দুধ অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মায়েদের ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে। কারণ: দুধে থাকা ফ্যাট ও ক্যালোরি অতিরিক্ত ওজন বাড়ায়। ঝুঁকি: অতিরিক্ত ওজন উচ্চ রক্তচাপ বা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- ফেনিলকেটোনিউরিয়া যারা ফেনিলকেটোনিউরিয়ায় আক্রান্ত, তারা দুধে থাকা ফেনিলঅ্যালানিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড হজম করতে অক্ষম।
লক্ষণসমূহ: স্নায়ুজনিত সমস্যা মানসিক অস্থিরতা কারণ এটি একটি বিরল জেনেটিক
সমস্যা।
গর্ভাবস্থায় দুধে সমস্যার সমাধান
গর্ভাবস্থায় দুধ গুরুত্বপূর্ণ হলেও, কারো কারো জন্য এটি সমস্যার কারণ হতে পারে।
ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স, অ্যালার্জি, গ্যাস্ট্রিক বা বিশেষ কিছু শারীরিক অবস্থা দুধ
খাওয়ার সময় অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সমস্যার
প্রকৃতি বুঝে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে, দুধের বিকল্প বা পরিপূরক গ্রহণ করে
প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব।
- ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের জন্য সমাধান ল্যাকটোজ-ফ্রি দুধ বাজারে সহজলভ্য ল্যাকটোজমুক্ত দুধ বেছে নিতে পারেন। উপযুক্ত বিকল্প সয়ামিল্ক, বাদামের দুধ (আলমন্ড মিল্ক), বা ওট মিল্ক। পুষ্টি সম্পূরক ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণে সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।
- দুধে অ্যালার্জির জন্য সমাধান দুধ পরিহার করুন ।যাদের দুধে অ্যালার্জি রয়েছে, তারা দুধ পুরোপুরি এড়িয়ে চলুন। ডাক্তারি পরামর্শ অ্যালার্জি নিশ্চিত করার জন্য অ্যালার্জি টেস্ট করুন এবং বিকল্প খাদ্যগ্রহণ সম্পর্কে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। বিকল্প প্রোটিন সয়া প্রোটিন, ডাল, মাংস বা ডিম থেকে প্রোটিন গ্রহণ করুন।
- গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির জন্য সমাধান গরম দুধ: ঠান্ডা দুধের পরিবর্তে গরম দুধ পান করলে হজম ভালো হয়। অল্প করে পান একবারে বেশি পরিমাণ দুধ পান না করে অল্প অল্প করে পান করুন। মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন মশলাদার খাবারের সঙ্গে দুধ না খেলে অ্যাসিডিটি কম হয়।
- ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য সমাধান স্কিমড দুধ পূর্ণচর্বিযুক্ত দুধের পরিবর্তে কম চর্বিযুক্ত বা স্কিমড দুধ বেছে নিন। পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: দিনে ১-২ গ্লাস দুধ যথেষ্ট, অতিরিক্ত পরিহার করুন।
- ফেনিলকেটোনিউরিয়ার জন্য সমাধান বিশেষ চিকিৎসা: এ সমস্যায় ভুগলে খাদ্য তালিকা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাজান। দুধের পরিবর্তে বিশেষ ফর্মুলা এই রোগীদের জন্য বিশেষ ফর্মুলা খাবার বাজারে পাওয়া যায়। কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে? যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন দুধ খাওয়ার পর শ্বাসকষ্ট বা তীব্র অ্যালার্জি। দীর্ঘমেয়াদি পেটে ব্যথা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। দুধ থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
গর্ভাবস্থায় জাফরান দুধ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় জাফরান দুধ খাওয়ার উপকারিতা জাফরান (কেশর) একটি মূল্যবান এবং
স্বাস্থ্যকর মসলা, যা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে এর পুষ্টিগুণ আরও বৃদ্ধি পায়।
গর্ভাবস্থায় জাফরান দুধ খাওয়া একটি প্রচলিত অভ্যাস, বিশেষত ভারতীয় উপমহাদেশে।
এটি মায়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং শিশুর বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এর সঠিক
ব্যবহার জানা জরুরি। নিচে গর্ভাবস্থায় জাফরান দুধ খাওয়ার উপকারিতা, সতর্কতা এবং
গ্রহণের সঠিক পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
- রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে জাফরান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। এটি গর্ভবতী মায়ের শরীরে রক্ত প্রবাহ সুষ্ঠু রাখে, যা গর্ভস্থ শিশুর সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করে।
- হজমশক্তি উন্নত করে গর্ভাবস্থায় হজমের সমস্যা সাধারণ একটি সমস্যা। জাফরান দুধ অন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
- মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি জাফরানে থাকা সক্রিয় উপাদানগুলো মস্তিষ্কের সেরোটোনিন লেভেল বাড়িয়ে দেয়, যা মায়ের মানসিক চাপ কমায় এবং ভালো ঘুম নিশ্চিত করে।
- ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, গর্ভাবস্থায় জাফরান দুধ পান করলে শিশুর ত্বক উজ্জ্বল হয়। যদিও এর কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই, তবে এটি মায়ের ত্বক ভালো রাখতে কার্যকর।
- ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে জাফরানে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে, যা মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
- বুক জ্বালা কমায় গর্ভাবস্থায় অ্যাসিডিটির সমস্যা খুবই সাধারণ। জাফরান দুধ এই সমস্যাটি কমাতে কার্যকর।
জাফরান দুধ খাওয়ার সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় জাফরান দুধ সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করলে এটি মা ও শিশুর জন্য উপকারী হতে
পারে। তবে অতিরিক্ত গ্রহণ ঝুঁকিপূর্ণ। জাফরান দুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ
নেওয়া বাঞ্ছনীয়। সঠিক পদ্ধতিতে খেলে এটি মায়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং গর্ভস্থ
শিশুর বিকাশে সহায়ক হতে পারে।
- অতিরিক্ত জাফরান খাওয়া ক্ষতিকর অতিরিক্ত জাফরান গ্রহণ করলে গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ অতিমাত্রায় কমে যেতে পারে এবং জরায়ুর সংকোচন ঘটতে পারে। এটি গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
- অ্যালার্জির সমস্যা কিছু নারীর জাফরানে অ্যালার্জি হতে পারে। এটি ত্বকের চুলকানি, র্যাশ বা শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে।
- খাঁটি জাফরান বেছে নেওয়ার প্রয়োজন নিম্নমানের বা ভেজাল জাফরান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। বাজার থেকে খাঁটি জাফরান কিনুন।
- গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে পরিহার করুন গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে জাফরান দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো। এ সময় গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে। জাফরান দুধ খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন। দিনে ২-৩টি জাফরান স্ট্র্যান্ড (সূত্র) দুধে মিশিয়ে খাওয়া নিরাপদ। সময়: দ্বিতীয় বা তৃতীয় ত্রৈমাসিক থেকে খাওয়া শুরু করুন। ১ গ্লাস গরম দুধ নিন। এতে ২-৩টি জাফরান স্ট্র্যান্ড যোগ করুন। ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে পান করুন।
লেখক এর শেষ কথা
গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। যেটা কিনা আপনার এবং আপনার গর্ভে
শিশুর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুধে থাকা প্রোটিন শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ও
মায়ের শরীরের কোষ পূর্ণ গঠনে সহায়ক। প্রিয় পাঠক আপনি যদি আমাদের আজকের
আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার
উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে উপকৃত হবেন। এইরকম আরো নিত্যনতুন পোস্ট
দেখতে আমাদের পেজটি ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url